ভারত ফারাক্কা ব্যারাজের প্রায় সবকটি গেট খুলে দেওয়ায় পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে পানির স্রোত প্রবল হয়েছে। এ কারণে ১৫ দিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় পদ্মা ও মহানন্দা নদীর ভাঙন তীব্র হয়েছে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন নদীতীরে বসবাসকারী ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। স্থানীয়রা জানান, ভাঙনে সদর উপজেলার আলাতুলী ইউনিয়নের কোদালকাটি এলাকায় শতাধিক ঘরবাড়ি, প্রায় দুই হাজার বিঘা ফসলি জমি, একটি মসজিদ, চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নে ৩ শতাধিক বাড়িঘর, পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রায় ৩ হাজার বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। তারা বলছেন, এসব জায়গায় দুই বছর ধরে নদী ভাঙন চলছে। তবে ১৫ দিন আগে থেকে তা তীব্র হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকার এসব মানুষ আতঙ্কে নিদ্রাহীন রাত পার করেছেন। অনেকেই বাড়িঘর সরিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন।
সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাজির হোসেন জানান, ১৫ দিনের ভাঙনে তার ইউনিয়নের ১, ৩ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নারায়ণপুর বাতাসমোড়, বৌদ্দনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাতাসমোড় হাটবাজার, নারায়ণপুর বাতাসমোড় কমিউনিটি ক্লিনিক, ফিল্ডবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় এক শ বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে আরও পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি। চরআলাতুলী ইউনিয়নের কোদালকাটি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাদিকুল ইসলাম বলেন, ১৫ দিনে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকার প্রায় এক শ বাড়ি ভেঙে পদ্মানদীতে তলিয়ে গেছে। ভাঙন হুমকির মুখে রয়েছে পোলাডাংগা বিজিবি ক্যাম্প, দুটি মাদরাসা, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চবিদ্যালয়, চারটি মসজিদ ও দুই শতাধিক বাড়ি। চরআলাতুলী ইউনিয়নের কোদালকাটি এলাকায় নদীতীরে বালুর বস্তা ও জিও টিউব ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এ ছাড়া এক সপ্তাহের টানা বর্ষণে মহানন্দা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের কল্যাণপুর এলাকায় ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে দেড় শতাধিক পরিবার। অন্তত ২০টি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। কল্যাণপুর মহল্লার বাসিন্দা মাউনজেরা খাতুন বলেন, দুই বছরের ভাঙনে অন্তত ৩০টি বাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। ২ বছরে শতাধিক পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা-গোবরাতলা ইউনিয়নে প্রায় ২০০ বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা লিখিত আবেদন করলে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, পোলাডাঙ্গা বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় জিও ব্যাগে বালুর বস্তা ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন রোধে কাজ চলছে। আগামীতে ওই এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর, মনাকষা, মনোহরপুর হতে সদর উপজেলার আলাতুলী ইউনিয়নের কোদালকাটি পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে প্রকল্প প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এটা অনুমোদন হলে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।