জেলার প্রায় ১৮ লাখ মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব দীর্ঘদিন ধরে। সঙ্গে রয়েছে অব্যবস্থাপনা। এসব কারণে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যত ভেঙে পড়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানান, ‘এ হাসপাতালে মাত্র সাতজন চিকিৎসক রয়েছেন। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতাল চলছে ১০০ শয্যার জনবল দিয়েই।’ অভিযোগ, চিকিৎসকরা নিয়মিত না বসায় বহির্বিভাগে কর্মচারী ও বহিরাগতরা রোগী দেখেন, দেন ব্যবস্থাপত্র। ভর্তি রোগীরা পান নিম্নমানের খাবার।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের ২০৬ নম্বর কক্ষে পুরুষ রোগী দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার না থাকায় সেখানে রোগী দেখছিলেন নাজির হোসেন নামে চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী। ২১৩ নম্বর কক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় শিশু রোগী দেখছিলেন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার আবির ও দুই বহিরাগত। ২১৭ নম্বর কক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার (ইউনানি) ডা. মো. শাহাব উদ্দিন ছুটিতে থাকায় মহিলা রোগী দেখছিলেন কম্পাউন্ডার বুলবুল আহমেদ ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সাইফুল ইসলাম।
হাসপাতালে রোগী তহমিনা বলেন, ‘ডাক্তাররা কোনো কথা শোনেন না, শুধু আগেই তৈরি করা ওষুধের তালিকা থেকে লিখে দেন।’ আরেক রোগী খাদিজা বেগম বলেন, ‘প্যাথলজি বিভাগে নির্ধারিত ফি জমা দিয়েও অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে। রিপোর্ট দেওয়ার সময় জোরপূর্বক টাকা নেওয়া হয়।’ রোগীরা অভিযোগ করেন, হাসপাতালে নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ। সরকারি ওষুধ থাকলেও অনেক সময় বাইরে থেকে কিনতে হয়। রোগীদের পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় নির্ধারিত প্যাথলজিতে। এখানে ডাক্তার পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবদুল মোকাদ্দেস বলেন, ‘১০০ শয্যার জনবল দিয়েই ২৫০ শয্যার হাসপাতাল চালাতে হচ্ছে। বর্তমানে মাত্র সাতজন চিকিৎসক রয়েছেন।’ তবে তিনি কর্মচারী বা বহিরাগতদের দিয়ে রোগী দেখার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্থানে কর্মচারী বা বহিরাগত কোনো ব্যক্তি রোগী দেখলে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’