অসময়ে বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবার জয়পুরহাটে আমনের ফলনে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বাজারে ধানের দাম কম থাকায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন আমন চাষিরা। উৎপাদন খরচ তোলাই তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। কৃষক বিভাগ লোকসান কাটাতে মৌসুম শেষে ধান বিক্রির পরামর্শ দিচ্ছে। জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈলের কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমি ছয় বিঘা জমিতে ধানি গোল্ড ধান চাষ করেছি। এবার বৃষ্টির কারণে ফলন নষ্ট হয়ে গেছে। বিঘাপ্রতি ১২-১৪ মণ ধান পেয়েছি। অনেকের ১০ মণও হচ্ছে। হিসেব করে দেখা যায়, প্রতি বিঘার ধান বিক্রি হচ্ছে ১২-১৪ হাজার টাকা।’
কালাই উপজেলার হাতিয়র গ্রামের গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আগাম জাতের-১৭, ৭৫ ও ধানি গোল্ড ধান চাষ হয়েছে। এ ছাড়া মামুন ধান কিছু দিনের মধ্যে কাটা শুরু হবে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ১৭ ও ধানি গোল্ডের অবস্থা খুবই খারাপ। ধানে পচন রোগ ধরায় প্রতি বিঘায় ফলন ১৮-২০ মণের জায়গায় হচ্ছে ১২-১৪ মণ। পাঁচবিবি উপজেলার হাঁটুভাঙ্গা গ্রামের ফজল আলী বলেন, ফলন খারাপ হওয়ায় ধানি গোল্ড ও ১৭ ধান ফলন অনেক কমেছে। মামুন ধান ভালো হয়েছে। সেটি এখনো কাটা শুরু হয়নি। ভালো ধানের দাম একটু বেশি থাকলেও যেগুলোতে পচন রোগ হয়েছে সেগুলো ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামনে দাম আরও কমলে আমাদের অনেক লোকসান গুনতে হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাদিকুল ইসলাম জানান, এবার জেলায় ৩ লাখ ৪০ হাজার টন ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। তিনি কৃষকদের এখনই হতাশ না হয়ে মৌসুম শেষে ধান বিক্রির মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন। জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এবার আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ হাজার ৯৫ হেক্টর। ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টির কারণে ১১৩ হেক্টর খেত নষ্ট হওয়ায় আবাদ চাষ হয়েছে ৬৯ হাজার ৯৮২ হেক্টর। ইতোমধ্যে ২৫ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। বিঘাপ্রতি ফলন পাওয়া যাচ্ছে ১৬ থেকে ১৮ মণ, যা গত বছরের তুলনায় ৪-৬ মণ কম।
বর্তমান বাজারে মোটা জাতের ধান ১২০০-১২১০ এবং চিকন ধান ১২৩০ থেকে ১২৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা জানান, হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ধান এই দামে বিক্রি করে লাভতো দূরের কথা উৎপাদন খরচই উঠছে না। জমির দামসহ এক বিঘায় ধান চাষ করতে কৃষকের খরচ পড়ছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। ধান বিক্রি করে পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ২০ হাজার। সারসহ কৃষি উপকরণের দাম বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় পরবর্তী ফসল আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।