বান্দরবান লামা উপজেলার চকরিয়া-লামা সড়কে মরণ বাঁক নামে পরিচিত ইয়াংছা বাঁকে চলতি বছরে ২৮বার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটক, মালবাহী ও যাত্রী পরিবহন গাড়ি দুর্ঘটনার কবলিত হয় বাঁকটিতে। প্রাণ হারায় সাধারণ যাত্রী, পথচারী ও গাড়ী শ্রমিকসহ ১৬ জন। আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক।
অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, চকরিয়া হতে লামা আসার পথে ৬ মাইল নামক স্থান থেকে পৌনে এক কিলোমিটার রাস্তা হালকা ঢালু ও সোজা। ঢালু সরল রাস্তাটিতে গতিতে গাড়ি চালায় অপরিচিত সকলে। অতি গতিতে এসে হঠাৎ সামনে ইউটার্ন বাঁক পড়লে কিছুই বুঝার আগে নিয়ন্ত্রণ হারায় গাড়ি। বিশেষ করে অপরিচিত ড্রাইভাররা দ্রুত ও সহজে আসতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বাঁকটিতে চলতি বছরে সার ও মালবাহী ট্রাক ৩টি, তামাকবাহী ট্রাক ৫টি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শিশু খাদ্য বহনকারী কার্গো ট্রাক ১টি, জীপ ৪টি ও বাস ২টি, সিএনজি মাহিন্দ্র ৬টি এবং মোটর সাইকেল ৭টি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। অতিমাত্রায় যাত্রী ও মাল পরিবহন এবং দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানায় এলাকাবাসী।
ইয়াংছা বাঁকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক মোটরসাইকেল চালক ১ ও মিনি পিকআপ গাড়ির ধাক্কায় পথচারী একজন নিহত হয়। ২২ এপ্রিল বাসের ধাক্কায় এক আইসক্রীম বিক্রেতাসহ প্রাণ হারায় ২ জন। জুলাইয়ে ট্রাক উল্টে ড্রাইভার হেলপারসহ প্রাণ হারায় ২ জন। মাহিন্দ্র ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারায় ৩ জন। সর্বশেষ ১৭ ডিসেম্বর ভোরে ট্রাক উল্টে প্রাণ হারায় ৭ শ্রমিক।
লামা, চকরিয়া ও আলীকদম বাস মালিক সমিতি’র সভাপতি নুর হোসেন বলেন, ২০১৫ সালে ইয়াংছা বাঁকে ২৮বার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাণ হারায় সাধারণ যাত্রী, পথচারী ও গাড়ি শ্রমিকসহ ১৬ জন। আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক।
অপরদিকে লামা, চকরিয়া ও আলীকদম জীপ মালিক সমিতি’র সভাপতি মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, বিপদজনক এই বাঁকটিতে প্রতিনিয়ত ট্রাক, বাস, জীপ, মাইক্রোবাস, কার ও সিএনজি দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের উদাসীনতার কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। বাঁকে আগে ও পরে স্প্রীড ব্রেকার না থাকায় এবং রাস্তার দু’পাশের গাছের ডাল-পালা, ঝোঁপ ও জঙ্গল না কাটার কারণে বার বার ঘটছে প্রাণহানি।
ইয়াংছা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ত্রিপল চাকমা বলেন, দ্রুত গতিতে সরল রাস্তা পেরিয়ে এসে ইউটার্ন বাঁকটিতে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে অনেকে। বিশেষ করে অন্যান্য জায়গার ড্রাইভাররা এই রাস্তায় এসে বুঝতে না পেরে দুর্ঘটনার শিকার হয়।
লামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, অতি দ্রুত দুর্ঘটনা রোধে রাস্তার ট্রাফিক চিহ্নগুলো সংযুক্ত করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অতিমাত্রায় মালামাল পরিবহনকৃত গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ মাহমুদ বলেন, অতি শীঘ্রই পরিবহন শ্রমিক ও ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অবহিত করা হযেছে। মোড়ে হর্ন বাজান, সাইনবোর্ড ও আয়না দিয়ে বিপরীত দিকের গাড়ি সহজে দেখতে আয়না স্থাপন করা হবে। এছাড়া সওজ অধিদপ্তরকে রাস্তা প্রস্তুত করতে বলা হযেছে।
বিডি-প্রতিদিন/১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫/মাহবুব