পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের সন্তু গৌরীয় মঠের পুরোহিত হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেবীগঞ্জ। সোমবার সকালে শহরের বিজয়চত্ত্বর এলাকায় পুরোহিত হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার এবং বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচারের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে দেবীগঞ্জবাসী।
এদিকে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। দেবীগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে, আটককৃতদের দুইজন জেমএমবি এবং একজন ছাত্রশিবিরের সদস্য। রবিবার রাতে দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের প্রধানপাড়া গ্রামের জেএমবি সদস্য খলিলুর রহমান (৬০), একই উপজেলার আমির পাড়া এলাকার জেএমবি সদস্য বাবুল ইসলাম (৩২) এবং সোমবার সকালে কামাত পাড়া এলাকার ছাত্রশিবিরের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম (৩০) কে আটক করে পুলিশ।
গত রবিবার সকালে উপজেলার করতোয়া ব্রীজ সংলগ্ন শ্রী শ্রী সন্তু গৌরীয় মঠে যজ্ঞেশ্বর দাসাধীকারী (৫০) নামের এই হিন্দু পুরোহিতকে গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সন্ত্রাসীদের গুলি ও ককটেলের আঘাতে আহত হয় আরও দুই পুরোহিত। নিহত পুরোহিতের ভাইয়ের স্ত্রী বীনা রানী জানান, পুরোহিতের বাড়ি দেবীগঞ্জ উপজেলার সান্তুপাড়ায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। ১৮ বছর আগে গ্রামের জমি জমা বিক্রি করে ১৯৯৮ সালে এই মঠ প্রতিষ্ঠা করেন যজ্ঞেশ্বর দাসাধিকারী। এরপর মঠেই থেকে যান তিনি। ধর্মীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় এই ১৮ বছরে মাত্র কয়েকবার বাড়ি যান এই ব্রক্ষ্মচারী।
অন্যদিকে ক্ষোভে উত্তাল দেবীগঞ্জের জনসাধারণ সোমবার সকাল থেকে উপজেলার বিজয় চত্বর এলাকায় জড়ো হতে থাকে। বিভিন্ন এলাকা থেকে দল মত নির্বিশেষে পুরোহিত হত্যার বিচার দাবিতে মিছিল সহকারে মানববন্ধনে অংশ নেয় তারা। দেবীগঞ্জ উপজেলার সর্বস্তরের জনগনের আয়োজনে এই মানববন্ধনে অংশ নেয় দেবীগঞ্জ উপজেলা শাখার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ ক্ষত্রিয় সমিতি, জাগোহিন্দু পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল(জাসদ)ও বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টিসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা।। এছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থিরা মানববন্ধনে অংশ নেয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্যই জামায়াত-শিবির এবং মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা অবিলম্বে পুরোহিত হত্যার দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, যজ্ঞেশ্বর দাসাধীকারীকে ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করা হয়। মন্দিরের পুজারী গোপাল(৩৫) টের পেয়ে চিৎকার করলে তার হাতে-পায়ে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। অপর পুজারী নিতাইপদ দাস চিৎকার করলে তাকে ককটেল ছুঁড়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা মোটর বাইকে পালিয়ে যায়। আহতদের রংপুর এবং দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল আক্তার এ ঘটনায় তিনজনকে আটকের বিষয় নিশ্চিত করেছেন। পঞ্চগড় জেলার পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহমেদ জানান, তদন্তের স্বার্থে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দিন মোহাম্মদের নেতৃত্বে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি তদারকি কমিটি করা হয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ এস আহমেদ