''বাড়ির একটা ঘরও নাই। ঘরের চাল, বেড়া, খাটসহ চাউল, ডাউল আটা সব ওরা লি গিছে! রাঁদা ভাতও ওরা ফেলা দি গিছে। জানের ভয়ে ছেলেরা বাড়িত যাতি পারতিছে না। আমরা কি করি বাঁচপো?'' সোমবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের কাছে আর্তনাদ করে কথাগুলো বলছিলেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার পূর্ণকলস গ্রামের শুকুর আলীর স্ত্রী মাহেলা বেগম।
গত শুক্রবার ভোরে দুর্বৃৃত্তরা শুকুর আলীর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। আর যেসব সামগ্রী নেওয়া সম্ভব নয়, সেগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুর্বৃত্তরা এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
শুকুর আলী বলেন, প্রায় ত্রিশ বছর আগে ছোট ভাই সুজাব আলীর কাছ থেকে সাড়ে ১৬ শতক জমি কিনে তিনি বাড়ি করেন। সম্প্রতি সুজাব আলী সে জমির দেড় শতক পার্শ্ববর্তী গোপালপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার মোন্নাফ হোসেনের ভাতিজা বাবলুর কাছে বিক্রি করে। এরপর থেকেই মোন্নাফ তাদেরকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছে। রাজি না হওয়ায় শুক্রবার ফজর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হবার পর ১০-১২ জন লোক শুকুর আলীকে উঠিয়ে মোন্নাফ মেম্বারের বাড়িতে নিয়ে বেঁধে রেখে এলোপাথাড়ি মারধর করে। এতে তার বাম পা ভেঙে যায়। একই সময়ে লোকজনসহ শুকুর আলীর বাড়িতে হামলা করে বাড়ির টিনের চাল, বেড়া, খাট, টিভি এমনকি টিউবওয়েলটি ভেঙে নিয়ে যায়। ঘরের লেপ-তোষক বাইরে ফেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এতে বাধা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা শুকুর আলীর স্ত্রী মাহেলা বেগম (৫০) ও তার ছোট ছেলে মাহবুব আলম (১৭) কে পিটিয়ে আহত করে। বর্তমানে তারা তিনজনই বড়াইগ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সোমবার সরেজমিন ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শুকুর আলীর বাড়িতে শুধুমাত্র কয়েকটি খুঁটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে খুঁটির উপরেই নতুন করে চাল দিচ্ছে দখলকারী মোন্নাফ ও বাবলুর লোকজন। পাশে পড়ে রয়েছে পোড়ানো লেপ-তোষকের ধ্বংসাবশেষ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবুল কালাম আযাদ বলেন, মোন্নাফ ও তার লোকজন অন্যায়ভাবে বাড়িটি ভেঙে যাবতীয় মালামাল লুটে নিয়ে গেছে। তাছাড়া শুকুর আলীকে যেভাবে বেঁধে রেখে পিটিয়ে আহত করে তা খুবই অমানবিক।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মোন্নাফ মেম্বারের বাড়িতে গিয়ে সেখানে তালা ঝুলতে দেখা যায়। এ সময় মোবাইলে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কল রিসিভ করেননি তিনি।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, এ ঘটনায় সোমবার থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের আটকের চেষ্টা চলছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ এস আহমেদ