টাঙ্গাইল টাউন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে ল’ কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের প্রতিবাদে কোমলমতি শিশুরা সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকরা শহরের ভিক্টোরিয়া রোডে অবস্থান নিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা তা অবরোধ করে রাখে। এ সময় পুরো শহরের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
গত ৯ মার্চ কতিপয় আইনজীবী ও ল’ কলেজের ছাত্ররা বিদ্যালয় মাঠে ঘর তৈরীর জন্য সিমেন্টের খুঁটি আনতে থাকেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের প্রধান অতিথি থেকে উক্ত ঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে একটি খুঁটি পুতে দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকসহ ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়।
টাঙ্গাইল টাউন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৩৯ সালে ৪১ শতাংশ ভূমির উপর প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ হয়। গত ১৯৯৯ তারিখের এক সভায় এই সম্পত্তি থেকে ১৪ শতাংশ ভূমি মহিলা সমিতি ও ২৭ শতাংশ ভূমিতে বিদ্যালয় ও ল’ কলেজ স্ব স্ব অবস্থানে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তৎকালীন সংসদ সদস্য প্রয়াত আব্দুল মান্নান প্রস্তাবে ল’ কলেজটি অন্য একটি স্থানে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অদ্যাবদি ল’ কলেজটি স্থানান্ত না করে বিদ্যালয় মাঠেই তাদের পরিধিবর্ধিত করণ কাজ শুরু করায় বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে।
টাঙ্গাইল টাউন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাইয়ার জাহা ফারজানা জানান, অত্র বিদ্যালয়ে ১২শ’ ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেখা করে। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার মান ভালো হওয়ায় এ বিদ্যালয়ের একটি সুনাম রয়েছে। গত ৯ মার্চ দুপুরে কতিপয় আইনজীবী সিমেন্টের খুঁটি নিয়ে এসে বিদ্যালয়ের মাঠের মধ্যে জমা করতে থাকে। এর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম এসে কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে একটি খুঁটি পুতে রেখে যান। পরে অন্যান্যরা আরো খুঁটি পুতে ঘরের কাঠামো তৈরী করতে থাকে। এ সময় আমরা বাধা দিতে গেলে তারা আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিলাজ করে। ছাত্রছাত্রীদের ভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। পরে বাধ্য হয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তিনি দাবি করেন, বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের খেলাধুলার জন্য মাঠের প্রয়োজন। এই ছোট মাঠে এমনিতেই দুই শিফটে এসেমব্লি চালাতে হচ্ছে।
টাঙ্গাইল ল’ কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল এডভোকেট খান মোহাম্মদ খালেদ জানান, বিদ্যালয়ের ২৭ শতাংশ জমি থেকেই ল কলেজের নামে ১২ শতাংশ জমি লিজ দেয়া আছে। ল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাস র’মের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমেই ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমেই ক্লাস রুম তৈরীর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ল কলেজের ক্লাস হয় রাতে তাই টিনের ঘরটি তৈরী হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও এটি ব্যবহার করতে পারবে।
দুপুরে সরজমিনে বিদ্যালয় পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে সিমেন্টের খুটি পুতে একটি ঘরের কাঠামো তৈরী করা হয়েছে। এ সময় বিদ্যালয়ের উপস্থিত ছাত্রছত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের খেলার মাঠটা ফিরিয়ে দেন। আমরা কোথায় খেলাধুলা করবো। এসময় কতিপয় অভিভাবক ছাত্রছাত্রীদের সাথে সুর মিলিয়ে বলেন, এই স্কুলের যতটুকু খেলার মাঠের জন্য জায়গা আছে। সেটুকু দখল হয়ে গেলে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস রুমে আবদ্ধ হয়ে পড়বে। তাদের খেলাধুলার কোনো জায়গা থাকবে না। অভিভাবক মর্জিনা বেগম জানান, আমি এই স্কুলে লেখাপড়া করেছি। ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলটি ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারীকরণ করেন। এই স্কুলে এখন আমার নাতি-পুতি লেখাপড়া করছে। এই স্কুলের জায়গা দখল করে ল কলেজ হতে পারে না। ল কলেজ অন্যত্র ছড়িয়ে নেয়ার দাবি জানান তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/১০ মার্চ ২০১৬/শরীফ