বগুড়ার শিবগঞ্জে প্রাইমারি স্কুলের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে উদ্ধারকৃত কাহালুর পশু চিকিৎসক কামরুজ্জামান নান্নুর হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য নান্নুকে অপহরণ করার পর অতিমাত্রায় ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ানোর ফলে সে মারা যায়। এ ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বগুড়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) গাজিউর রহমান জানান, গত ১৪ মার্চ রাত ১২টা থেকে পরের দিন ভোর ৫টা পর্যন্ত দুপচাঁচিয়া থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন দুপচাঁচিয়ার ধাম সুখানগাড়ীর মজিবর প্রামানিকের ছেলে সেলিম প্রামাণিক (৩৫), খোলস পূর্বপাড়ার হাবিবুর মন্ডলের ছেলে শাহেদ মন্ডল ওরফে কালু (৩৫), মোস্তফাপুরের মুক্তার সরদারের ছেলে বেলাল সরদার (৩৫), চামরুল ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মামুন মিয়া (৩৫) ও আদমদীঘির শাঁওইল পশ্চিমপাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে রুহুল আমিন ওরফে রতন (২৬)। গ্রেফতারকৃতদেরকে মঙ্গলবার বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু রায়হানের আদালতে হাজির করা হলে আসামী সেলিম ১৬৪ ধারায় এ হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন।
পুলিশ জানায়, নিহত নান্নুর আপন ভগ্নিপতি রতন অপহরণকারী দলের সঙ্গে চুক্তি করে। চুক্তি মতে, নান্নুকে অপহরণ করলে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে তা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেবে। চুক্তির পর অভিযুক্ত সেলিম, মামুন, বেলালসহ আরো ৭-৮ জন অপহরণের ১ সপ্তাহ পূর্বে গোপন বৈঠক করে। বৈঠকের পরিকল্পনা অনুযায়ী সেলিম ১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১২টার পর মোবাইলে পশু চিকিৎসক নান্নুকে দুপচাঁচিয়া থানার মোস্তফাপুরে গরুর আচিল কাটার জন্য যেতে বলে। নান্নু বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ওই নির্জন এলাকা দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে মোস্তফাপুর যাওয়ার পথে অপহরণকারী দল তার গতিরোধ করে মুখ এবং হাত ও পা বেঁধে ফেলে। সেলিমের নেতৃত্বাধীন দলটি নান্নুকে রাত ১২টা পর্যন্ত বাঁকাদহ এলাকার জঙ্গলে রেখে ১২টার পর অন্য আরেকটি টিমের হাতে হস্তান্তর করে। অপহরণকারী দল নান্নুকে ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্য অতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ায়। এতে করে নান্নু স্ট্রোক করে মারা যায়। পরে ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে তারা নান্নুর মৃতদেহটি গুম করে ফেলার জন্য শিবগঞ্জ থানার ছাতুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ল্যাট্রিনের সেপটিক ট্যাংকির ভিতরে রেখে দেয় এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ নান্নুর মৃতদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় কামরুজ্জামান নান্নুর পিতা বাদী হয়ে কাহালু থানায় মামলা দায়ের করেন।
বিডি-প্রতিদিন/১৬ মার্চ ২০১৬/শরীফ