লক্ষ্মীপুরে ইউনিয়র পরিষদের কার্যালয়গুলো এখনো রয়ে গেছে মান্ধাতা আমলের। বর্তমান সরকারের আমলেও জীর্ণ শীর্ণ অবস্থায় এসব ইউপি’র কার্যক্রম চলছে। জেলার ৫৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ২৭টিতে এখনো গড়ে উঠেনি ইউপি কমপ্লেক্স ভবন। যুগ যুগ ধরে এসব পরিষদে একের পর এক চেয়ারম্যানের পরিবর্তন ঘটলেও পরিবর্তন ঘটেনি কার্যালয়ের। একই সাথে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ যে সেবা পাওয়ার কথা তাও ঠিক মত হচ্ছেনা বলে মন্তব্য করেন সচেতন মহল।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সুত্রে জানা যায়, জেলার ৫ টি উপজেলার মধ্যে ৫৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। ইউপি কমপ্লেক্স ভবন রয়েছে ৩১ টি ইউনিয়নে, অপর ২৭ টি ইউনিয়নে ইউপি কমপ্লেক্স ভবন নেই। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৯ টি, রায়পুরে ৫টি, রামগতিতে ৬টি, কমলনগরে ৬টি ও রামগঞ্জে ১টি ইউনিয়ন।
এসব ইউনিয়নে সেই মান্ধাতা আমলের কাচারী ঘর কিংবা রুম ভাড়া নিয়ে চলছে ইউপি কার্যক্রম।
অথচ গ্রামীণ অবকাঠামো, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাবার পানি ও স্যানিটেশন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও যুব সম্পর্কিত বিষয়াবলী, গ্রামীন আদালতে বিরোধ মীমাংসা এবং উন্নয়নসহ আদর্শ গ্রাম ও সমাজ গঠনের জন্য গড়ে উঠা এসব ইউপি কার্যালয়গুলো বর্তমান সরকারের আমলে এসেও অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে। জীর্ণ শীর্ণ অবস্থায় এসব ইউপি’র কার্যক্রম চলছে। এতে কার্যক্রম পরিচালনায় নানা সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
সরেজমিন আজ সকাল ১১ টার দিকে সদর উপজেলার ২১ নং টুমচর ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, একটি কাচারী ঘরে চলছে ইউপি’র কার্যক্রম। বিদ্যুৎ বিহীন অন্দকার রুমে বসে আছেন কয়েকজন বাসিন্দা ও এ ইউনিয়নের উদ্যোক্তা তুহিন আক্তার। তার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, টিন শেড ঘরে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায়না, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত ঠিকমতো ৩ ঘন্টাও বিদ্যুৎ থাকেনা, সৌর বিদ্যুৎ থাকলেও সমস্যা সৃষ্টি হলে মেকানিকদের খুঁজে পাওয়া যায়না এতে করে ই-তথ্য সেবা কার্যক্রম চালাতে বেগ পোহাতে হয়। সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হন।
ওই ইউপি’র সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, জীর্ন শীর্ণ অবস্থায় একটি ঘরে গাদাগাদি করে কাজ করতে হয়। এতে করে প্রায় সময়ে পরিষদে কোন বৈঠক কিংবা মিটিং হলে লোকজনের উচ্চস্বরে কথাবার্তায় কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয়।
টুমচর ইউপি’র চেয়ারম্যান সৈয়দ নুরুল আমিন জানান, স্বাধীনতার পর থেকে এখনো পর্যন্ত ইউপি কমপ্লেক্স ভবন গড়ে উঠেনি। জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে জানালেও কবে নাগাদ ভবন নির্মাণ করা হবে তা জানাতে পারেননি তিনি। একই অবস্থা পাশবর্তী শাকচর, চর রমনী মোহনসহ অন্য ২৬টি ইউনিয়নেও।
এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন পেশাজীবী সাধারণ মানুষের সাথে কথা হলে তারা জানান, নির্বাচন আসে নির্বাচন যায়, চেয়ারম্যান আসে চেয়ারম্যান যায়, যুগের পর যুগ চলে যায় তবুও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনা। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকা, টি আর, কাবিখাসহ গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নের সকল বরাদ্ধকৃত টাকা জনপ্রতিনিধিরা বেশীর ভাগই আত্মসাৎ করেন। ফলে সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার থেকে যেমনি বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি এলাকার উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেন তারা।
লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক মো: জিল্লুর রহমান চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, কয়েকটি ইউপি কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। কিছু ইউনিয়নে ভবন নির্মাণের জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছেনা, ওই এলাকা গুলোতে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/ ১০ মে ১৬/ হিমেল-২৩