দরপত্রেরর হিসাবের বাইরে পুরাতন খাতা ওজনে বেশি দেওয়ার সময় সাধারণ কর্মচারীদের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের দুই কর্মকর্তা। শুক্রবার বিকেলে শিক্ষা বোর্ড চত্বরে এ ঘটনা ঘটনা ঘটে।
ঐ দুই কর্মকর্তা হলেন, শিক্ষা বোর্ডের ভাণ্ডার শাখার উপ-সচিব সেলিনা পারভীন এবং সহকারী সচিব লিটন সরকার।
এ ঘটনায় সাধারণ কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিলে ঘটনাস্থলে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সচিব উপস্থিত হয়ে তাদের শান্ত করেন। অভিযোগ উঠেছে, পুরাতন খাতা বিক্রির মাধ্যমে বড় ধরনের আত্মসাতের সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জড়িত রয়েছেন।
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, বোর্ডের পুরাতন খাতা বিক্রির জন্য একটি দরপত্র কমিটি গঠন করা হয়। দরপত্র কমিটির প্রধান বোর্ডের সচিব ড. আনোয়ারুল ইসলাম এবং ভাণ্ডার শাখার উপ সচিব সেলিনা পারভীন। গত ১৯ এপ্রিল বিভিন্ন সংবাদপত্রে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। দরপত্র জমাদানের সর্বশেষ তারিখ ছিলো গত ২ মে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা দরপত্রে অংশগ্রহণ করেন। এরপর কাজটি পান ঢাকার লালু ও সাচ্চু নামের দুই ব্যবসায়ী।
এদিকে ওই দুই ব্যবসায়ীকে শুক্রবার সকাল থেকে কাগজ সরবরাহ শুরু হয়। কাগজ সংগ্রহের জন্য ব্যবসায়ী সাচ্চু ও লালু শিক্ষাবোর্ড চত্বরে তিনটি ট্রাক নিয়ে যান। প্রতি ট্রাকে নয়টন করে কাগজ সরবরাহের কথা। কিন্তু ভাণ্ডার শাখার উপ সচিব ও সহকারী সচিব নয়টনের বিপরীতে প্রতি ট্রাকে ১১ টন করে কাগজ সরবরাহ করেন। আর ওজন বেশি দেওয়ার জন্য ডিজিটাল মেশিনে সেট করা হয় টিউবওয়েলে ব্যবহৃত লোহার পাইপ। প্রায় তিন ফুট পাইপ মাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়।
ওজন চলাকালে বিকেলে বিষয়টি নজরে আসে শিক্ষা বোর্ডের দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মরত দুই কর্মচারীর। তারা বিষয়টির প্রতিবাদ করলে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন উপ সচিব সেলিনা পারভীন ও সহকারী সচিব লিটন সরকার। এক পর্যায়ে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারীদের সঙ্গে যোগ দেন সাধারণ কর্মচারীরাও। তারা বিষয়টির প্রতিবাদে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন।
এরপর সেখানে উপস্থিত হন, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আযাদ, সচিব ড. আনোয়ারুল ইসলাম, শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মঞ্জুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এসময় বোর্ড চেয়ারম্যান বিক্ষুব্ধ কর্মচারীদের শান্ত করেন এবং বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
ঠিকাদার জানান, দরপত্রে মাত্র ৬৩ টন কাগজ বিক্রির উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে গোডাউনে কাগজ রয়েছে প্রায় দেড়শ টন। কাগজে-কলমে ৬৩ টন দেখানো হলেও বাস্তবে বিক্রি করা হবে দেড়শ টন। প্রতিকেজি কাগজ বিক্রি করা হচ্ছে ২৭ টাকা দামে। বেশি কাগজ সরবরাহের আশ্বাস দিয়ে ওই দুই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন ভাণ্ডার শাখার উপ সচিব ও সহকারী সচিব।
অভিযোগের ব্যাপারে ভাণ্ডার শাখার উপ সচিব সেলিনা পারভীনের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি সহকারী সচিবও ফোন না ধরায় তাদের দুজনের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে এ ব্যাপারে দরপত্র কমিটির প্রধান ও বোর্ডের সচিব ড. আনোয়ারুল হক বলেন, ওজন বেশি দেওয়ার একটি অপপ্রচার চলছিল। এ বিষয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়ার পর ট্রাক থেকে কাগজ নামিয়ে পুনরায় ওজন করা হয়েছে। এখানে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিডি প্রতিদিন/১৭ জুন ২০১৬/হিমেল-২২