নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পৃথক স্থানে যৌতুকের টাকার জন্য সুমি আক্তার (২২), রাহিমা বেগম রুমি (২৯) ও শেফালী বেগম (২৬) নামে তিন গৃহবধুর উপর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় দুই জনকে গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
সোমবার দুপুরে উপজেলার দক্ষিণ হাটাব, ব্রাক্ষণখালী ও পিতলগঞ্জ ভক্তবাড়ি এলাকায় ঘটে গৃহবধু নির্যাতনের এসব ঘটনা। নির্যাতনের শিকার সুমি আক্তার মতলব থানার ফেইল্লাকান্দি এলাকার এরশাদ খানের মেয়ে, রাহিমা বেগম রুমি উপজেলার ব্রাক্ষ্মনখালী এলাকার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে ও শেফালী বেগম রূপগঞ্জ সদর এলাকার হেলাল মিয়ার মেয়ে।
এরশাদ খান জানান, ৪ বছর আগে রূপগঞ্জ থানার হাটাব এলাকার আমির হোসেনের ছেলে জসীমের সাথে তার মেয়ে সুমি আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় তিনি তার মেয়েকে ঘরের আসবাবপত্র ও ফ্রিজসহ প্রায় ২ লাখ টাকার মালামাল প্রদান করেন। বিয়ের কিছুদিন পর স্বামী জসীমসহ আল-আমিন, হাজেরা বেগম, পাখি বেগম ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে সুমির কাছে। যৌতুকের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সুমিকে বাড়িতে আটক রেখে তার পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সুমির সাথে ফোনে যোগাযোগ কারতে চাইলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। মেয়ের কথা জানতে চাওয়া হলে কিছু জানে না বলে জানায় সুমি আক্তারের শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বর্তমানে সুমি আক্তার নিখোঁজ রয়েছে। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অপরদিকে রাহিমা বেগম রুমি জানান, ১০ বছর আগে ঢাকা জেলার মোহাম্মদপুর এলাকার মৃত কাশেম মিয়ার ছেলে আজিজ মিয়ার সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে ওয়াসিম খান (৮) নামে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। সন্তান জন্ম হওয়ার পর থেকেই তারা উপজেলার পিতলগঞ্জ এলাকায় বসবাস করে আসছেন। বিয়ের বেশ কিছুদিন পর থেকেই স্বামী আজিজ মিয়া মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তাকে মাদক সেবনে বাধা দিলে রাহিমাকে তার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক এনে দিতে বলেন। সে অনেক বার টাকা এনে দিলেও সে ভাল হয়নি। সোমবার দুপুরে মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় আজিজ মিয়া তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে। তার চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে সে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
হেলাল মিয়া জানান, দুই বছর আগে উপজেলার বাড়িয়াছনি এলাকার ফারুক মোল্লার ছেলে শওকত মিয়ার সাথে তার মেয়ে শেফালী বেগমের বিয়ে হয়। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে জামাতা শওকত মিয়াকে একটি অটো রিক্সা কিনে দেন হেলাল মিয়া। বিয়ের কিছুদিন পরেই তাদের ঘরে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান জন্মের পর থেকেই শওকত মিয়া বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব্য সেবন করতে শুরু করেন। শেফালীকে বাবার বাড়ি থেকে মাদকের টাকা এনে দিতে বলেন। না দিলে নির্যাতন শুরু করেন। সোমবার দুপরে মাদক কেনার টাকা না পেয়ে শেফালী বেগমকে তার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা এনে দিতে বলে। টাকা এনে দিতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় শেফালী বেগম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী শওকত মিয়াসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে পিটিয়ে আহত করে। এক পর্যায় স্বামী শওকত মিয়া শেফালী বেগমকে গলাটিপে ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে। শেফালীর চিৎকারে এলাকাবাসী এসে তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, পৃথক তিন ঘটনায় একটির মামলা হয়েছে। বাকি দুই ঘটনায় তদন্ত মোতাবেক মামলা রুজু করা হবে। অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চলছে।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ