দেশের শত শত শিল্পকারখানা যখন গ্যাসের অভাবে ধুকছে, তখন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন সিএনজি ফিলিং ষ্টেশন থেকে মিটারের বাইরে চোরাই সংযোগ দিয়ে দেদারসে গ্যাস চুরি হচ্ছে। চোরাই এসব গ্যাস যাচ্ছে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে। অভিযোগ রয়েছে, বাগরাবাদ গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ওইসব ষ্টেশন থেকে মাসে কমিশন হিসেবে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। একইসঙ্গে অবৈধভাবে একত্রে থাকা অর্ধশতাধিক সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তির কারণে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দেশের লাইফ লাইন হিসেবে খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় সড়কের দুই পাশে নয়টি সিএনজি ফিলিং ষ্টেশন রয়েছে। এরমধ্যে আমজাদের বাজারে অবস্থিত 'চিওড়া সিএনজি ফিলিং ষ্টেশন লি.' থেকে প্রতিদিনই চোরাই সংযোগ দিয়ে কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকে থাকা অর্ধশতাধিক ছোট-বড় সিলিন্ডার ভর্তি করে গ্যাস পাচার হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ ভারত সীমান্তবর্তী বিভিন্ন উপজেলায়।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) সরেজমিন দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকে বিভিন্ন আকারের ছোট-বড় অর্ধশতাধিক সিলিন্ডার বোঝাই রয়েছে। সিলিন্ডারভর্তি ট্রাকগুলোর পিছনের অংশ ত্রিপল দিয়ে মোড়ানো। সবগুলো সিলিন্ডার আবার একটি লাইনে সংযুক্ত থাকে। ওই লাইনের মাধ্যমে সিলিন্ডারগুলোতে অবৈধভাবে গ্যাস ভর্তি করা হচ্ছে। চিওড়া সিএনজি ফিলিং ষ্টেশনের অবৈধ লাইনটি দক্ষিণ পাশে দেয়ালের সাথে ঢাকনা দিয়ে ঢাকা।
পূর্ব থেকে যোগাযোগ থাকা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানগুলো আসলে ষ্টেশনের কর্মচারীরা ওই অবৈধ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস ভর্তি করে। বিষয়টি যাতে অন্যান্য চালকরা ও সাধারণ মানুষ বুঝতে না পারে সেজন্য নজেলের পাশে একটি ঢাকনা দেওয়া থাকে। অবৈধভাবে গ্যাস ভর্তির কারণে ওই ফিলিং ষ্টেশনে প্রকাশ্যে থাকা দুইটি বৈধ নজেলের মাধ্যমে গ্যাস নিতে যাওয়া সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস , যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে গ্যাস ভর্তি করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অবৈধভাবে গ্যাসভর্তি কাভার্ডভ্যানগুলো রাঙ্গামাটি, ফকিটছড়ি ও বান্দরবনসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের ভারতীয় সীমান্তবর্তী বিভিন্ন উপজেলার সিএনজি ফিলিং ষ্টেশনগুলোতে নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে মিটার টেম্পারিংয়ের কারণে বাগরাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আমজাদের বাজারস্থ ‘চিওড়া ফিলিং ষ্টেশন লিমিটেড’ ও কালিবাজারস্থ ‘খালেক সিএনজি ফিলিং ষ্টেশন’ নামের দুটি সিএনজি ফিলিং ষ্টেশন বন্ধ করে দেয়। পরে উভয়টির মালিক ষ্টেশন বন্ধের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন(১৬৯৪৪/২০১২) দাখিল করলে ছয় মাসের জন্য বন্ধ কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আদেশের সময় পেরিয়ে গেলেও ষ্টেশন দুটির কার্যক্রম চলছে পুরোদমে।
এ ব্যাপারে বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের জিএম (অপারেশন) আবুল হাসনাত বলেন, ''অবৈধ সংযোগের বিষয়ে জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব। এ বিষয়ে তিনি আরও তথ্যের জন্য জিএম(মার্কেটিং) এহসানুল হক পাটোয়ারীর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু এহসানুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে চিওড়া সিএনজি ফিলিং ষ্টেশনের মালিক আবদুল খালেক বলেন, ''যারা কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকভর্তি করে গ্যাস নেয় তাদের সরকারি লাইসেন্স আছে।'' তবে অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে গ্যাস দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি উল্টো জিজ্ঞাসা করেন, লেখালেখির মাধ্যমে তার ক্ষতি করে লাভ কি?
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ