বগুড়ার মাঠে মাঠে সোনা রঙের ধান বাতাসে দোল খাচ্ছে। মাঠের নতুন ধান ঘরে তুলতে বগুড়ার চাষীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পুরোদমে কাটা মাড়াই শুরু না হলেও আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। নতুন ধান ঘরে ওঠার পর কৃষকের ঘরে ঘরে আনন্দের বাতাস বইছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলায় এবার ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও টার্গেটের বেশি জমিতে আমন চাষ করেছে চাষিরা। কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের মতে সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। এতে চাল আকারে ফলন ধরা হয়েছে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। এবার বাম্পার ফলন হওয়ায় উৎপাদন ৫ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিকটন ছাড়িয়ে যাবে বলে কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।
কৃষি বিভাগ জানায়, অনুকূল আবহাওয়া, সময়মত সার, বীজ ও পরিচর্যার কারণে ফলন ভালো হয়েছে। জৈব সারের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল জাতের আমন চাষ বেশি হয়েছে। এ কারণে জেলায় চাষিরা এবার বাম্পার ফলন পেতে যাচ্ছে। ভাল ফলনের সাথে ভাল দাম পাবে বলে চাষিরা আশাবাদী। আগামজাতের রোপন করা আমন ধান ইতোমধ্যে কাটা শেষ হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন মাঠে আমন মৌসুমের ব্রি ধান-৬২ ও বিনা-৭ কৃষকেরা চাষ করে। ধান বিক্রয় করে কৃষকরা ওই জমিতে আলু ও সরিষা চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমন ধানের ফলন ভাল হয়েছে। আমন ধানের মধ্যে ব্রি ধান-৬২ বিঘা প্রতি ১২ মণ থেকে ১৪ মণ ও বিনা-৭ বিঘা প্রতি ১৫ মণ থেকে ১৬ মণ হারে ফলন হয়েছে। হাটে বাজারে নতুন ধান তেমনভাবে বেচাকেনা শুরু না হলেও কিছু কিছু ধান হাটে উঠতে শুরু করেছে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার নাহিদ হাসান জানান, উপজেলায় আমন চাষিরা ধান কাটতে শুরু করেছে। যারা আগামভাবে চাষবাস করেছে তারাই সবার আগে ধান কাটতে শুরু করেছে। আমন ধান কাটার পর চাষিরা আলু ও সরিষা চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়বেন।
বগুড়া কাহালু উপজেলার আব্দুল হান্নান জানান, গতবারের মত এবারও বাম্পার ফলন হবে। ধানের রং যেমন হয়েছে, তেমনি দানা ভাল হয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কড়িতলা গ্রামের মো. সোহেল জানান, ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। গত বছর ধানের দাম কম ছিল। এবার বাজার চাঙ্গা হলে আমন চাষিরা লাভবান হবেন।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার আমন চাষি আলী আকবর জানান, ভাল ফলন পাওয়া গেছে। জেলায়র মধ্যে নন্দীগ্রাম উপজেলায় চাষিরা আগামজাতের আমন ধান চাষ করে থাকে। এই ধানগুলো আগামভাবেই কাটা হয়। প্রতি বিঘায় ১৪ মণ ধান পেয়েছেন। আবাদে খরচ কম হওয়ায় কিছুটা লাভের আশা করছেন তিনি। এখন শুধু হাটে ধানের দাম থাকতে হবে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার জানান, জেলায় এবার ভাল ফলন পাওয়া যাচ্ছে। জেলায় চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। বাড়তি চাষসহ মোট ফলন পাওয়া যাবে প্রায় ৫ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর বগুড়ায় ভাল ফলন পাওয়া গিয়েছিল। তাছাড়া জেলায় গত কয়েক বছর ধরেই আমনের ভাল ফলন পাওয়া যাচ্ছে। উচ্চফলনশীল জাতের কারণে ভাল ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৭ নভেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ/০৮