পূর্ব কাউয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির মেধাবি ছাত্র রুবেল মিয়া। এখন বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। এরই মধ্যে বাংলা ও ইংরেজি দুই বিষয়ের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আগামীকাল রবিবার গণিত বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিত সে। কিন্তু তার আগেই গাছের চাপায় পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে তার।
জাণা গেছে, বাড়ির পাশেই গাছ কাটতে সহযোগি হিসেবে রুবেলকে ব্যবহার করার সময় গাছের একটি বড় ডাল তার মাথায় আঘাত হানে। সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু ঘটে। ঘটনাটি ঘটেছে আজ শনিবার সকাল ১১টার দিকে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকা পূর্ব কাউয়ারচর গ্রামে।
গ্রামবাসিরা জানিয়েছেন, ওই গ্রামের আতাবুর রহমানের বাড়ির একটি শিমুল গাছ কিনে নেয় ফুল মিয়া নামের এক কাঠ ব্যবসায়ি। ঘটনার দিন ফুল মিয়া ৩জন শ্রমিকদের দিয়ে ওই গাছ কাটতে যায়। গাছ কাটার আগে ডালপালা ছাঁটাইয়ের সময়ে ওই ঘটনা ঘটে।
শরবেশ আলী নামের এক গ্রামবাসি বলেন, "ডালাপালার সঙ্গে দড়ি বেঁধে তা টানতে দেয় নিহত রুবেলকে। হঠাৎ করে একটি ডাল রুবেলের মাথায় আঘাত করে। ঘটনাস্থলে সে মারা যায়। ঘটনার পর পরই কাঠ ব্যবসায়িরা পালিয়ে গ্রাম ত্যাগ করে। এদিকে রুবেলের বাবাও বাড়িতে নেই। সে কাজ করতে ঢাকায় গেছে।"
পূর্ব কাউয়ারচর গ্রামের ওয়ার্ড মেম্বার আবুল হাশেম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, "ওই কাঠ ব্যবসায়িদের অবহেলা আর অসাবধানতার কারনেই শিশুটির মৃত্যু ঘটেছে। পূর্ব কাউয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক জানান, রুবেল মেধাবি একজন ছাত্র। সে আমার স্কুলেই লেখাপড়া করত। বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে সে। গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে যা শেষ হওয়ার কথা ২৪ ডিসেম্বর। বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নেয় সে।"
নিহত রুবেলের বাবা বানিচ মিয়া একজন দিনমজুর। সংসারে তারা দুই ভাই ও এক বোন। ১৫দিন কাজের জন্য ঢাকায় গেছেন বানিচ মিয়া। মা আছাতন বেগম বলেন, "পোলার বাপে অনেক কষ্ট করে আয়রোজগার করে। তার খুব ইচ্ছা দুই পোলাঘরে লেহাপড়া করাবে। কিন্তু তারা আমগর সর্বনাশ কইরা দিল। ছোট বাচ্চা, তাকে দিছে দড়ি ধরে টানতে। বড় মানুষ গুলোর কিছুই হইল না মারা গেল আমার পোলা। আমি এর বিচার চাই। যারা আমার বুক খালি করল তাদের শাস্তি দাবি করছি।"
এ ব্যাপারে রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এবিএম সাজেদুল ইসলাম জানান, "ঘটনাটি আমার জানা নেই। এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। তারপরও খোঁজ নেয়া হবে।"
বিডি-প্রতিদিন/ ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬/ তাফসীর-৮