নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও ফতুল্লা এলাকা থেকে দুই নারীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন শিশু বিক্রেতা ও অপর দুইজন ক্রেতা। মঙ্গলবার রাতে র্যাব-১১ এর একটি টিম ওই তিনজনকে গ্রেফতার করে।
টাকার বিনিময়ে নিজ সন্তানকে বিক্রি করার মত লোমহর্ষক ঘটনা উদঘাটন করে শিশু চুরি চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১ সদস্যরা। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে এক শিশুকে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ফরাজিকান্দা এলাকার মিনারা ওরফে তানিয়া (৪০), সদর উপজেলার ফতুল্লার মাসুম (৩০) ও একই এলাকার মৌসুমী (২১)। পলাতক রয়েছে চক্রের সদস্য আল আমিন (২৮) ও তার স্ত্রী সালমা (২২)।
আজ দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে অবস্থিত র্যাব-১১ এর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর সিনিয়র এএসপি আলেপউদ্দিন এসব তথ্য জানান। এসময় তিনি বলেণ, ঢাকার শাহ আলী থানা এলাকার বাসিন্দা সেতু বেগম গত ২২ ফেব্রুয়ারি র্যাব-১১ এর কাছে তার ৮ মাসের শিশু মরিয়ম নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ করেন। মরিয়ম ছাড়াও তার তিনটি সন্তান নিখোঁজ হয়েছে। সন্তানদের মধ্যে প্রথম জন ৫বছর বয়সে নিখোঁজ হয়। দ্বিতীয়বার তার ঘরে জন্ম নেওয়া সৌরভ নামের সন্তানও ৫ মাস বয়সে নিখোঁজ থাকে। তখন সে জানতে পারে শিশু সৌরভকে তার স্বামী বিল্লালের মাধ্যমে রোকন নামের পাশের বাসার ভাড়াটিয়া চুরি করে নিয়ে যায়। বর্তমানে শিশু সৌরভ রোকন দম্পতির সাথে কুষ্টিয়ায় রয়েছে।
এর পর সেতুর ঘরে জন্ম নেয় শারমিন নামে মেয়ে সন্তান। মাত্র ১১ মাস বয়সে সেতুর শাশুড়ির সাথে পারিবারিক কলহের কারণে সুলতানা নামের একজন নারী শিশু শারমিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং হত্যা করে শাহবাগ থানা এলাকায় একটি ডাস্টবিনে ফেলে রাখে। শাহবাগ থানা পুলিশ সুলতানাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়। চতুর্থ সন্তান শিশু মরিয়ম জন্ম নেওয়ার পরে তার স্বামীর সাথে ডির্ভোস হয়ে যায়।
পরে র্যাব তদন্ত করে নিশ্চিত হয় মরিয়ম নিখোঁজে জড়িত অপরাধীরা নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করছে। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও বন্দরে অভিযান চালিয়ে শিশু মরিয়মকে উদ্ধার ও তিনজনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে শিশু মরিয়মকে চুরি ও বিক্রির সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এছাড়া জানিয়েছেন, মরিয়ম ঢাকার মিরপুরে যে বাসায় থাকে তার পাশেই বসবাস করে আল আমিন (২৮) ও সালমা (২২) দম্পতি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মরিয়মকে নিজ ঘর থেকে চুরি করে। আল আমিন তার বোন মিনারা ওরফে তানিয়ার মাধ্যমে মরিয়মকে নিঃসন্তান মাসুম ও তার স্ত্রী মৌসুমীর কাছে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।
জিজ্ঞাসাবাদে মিনারা ওরফে তানিয়া জানায়, তার ভাই আল আমিনের স্ত্রী পলাতক সালমা তার নিজের সন্তানকেও প্রায় ৮ মাস পূর্বে ৭ মাস গর্ভে থাকা অবস্থায় মাত্র ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। র্যাব-১১ এর এএসপি আলেপউদ্দিন আরো জানান, শিশু মরিয়ম অপহরণ ও বিক্রির সাথে সস্পৃক্ত পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান চলছে।
বিডি প্রতিদিন/০১ মার্চ ২০১৭/হিমেল