রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসিয়ে শুরু হয়েছে বিজু উৎসব। তখন ভোরের আকাশে রক্তিম সূর্য্য। বাতাসে নানা রঙের ফুলে সৌরভ। নতুন বর্ষকে বরণ করতে তরুণরা সেজেছে নতুন রূপে। এরই মধ্যে চাকমা ও ত্রিপুরা তরুণীরা ঐতিহ্যবাহী সাজ-পোশাক থামি, পিনন, কবই, খাদি, খবং পরে নানা রঙে ঢঙ্গে সেজে প্রস্তুত হ্রদের পাড়ে। সবার হাতে পাহাড়ের মাধবীলতা, অলকানন্দা, নিম পাতা, রঙ্গন, জবাফুলসহ বাহারি ফুল আর কলাপাতা। নতুন বর্ষকে বরণ করতে পাহাড় সেজেছে নবরূপে। তিন দিনব্যাপী বৈসাবি অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে নদীতে ফুল ভাসিয়ে শুরু করা হয়েছে আনুষ্ঠানিকতা।
বুধবার সকাল ৯টা শহরের গর্জনতলী এলাকায় ত্রিপুরা পল্লীতে অনুষ্ঠানিক ফুল বিজু উৎসব উদ্ধোধন করেন, সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার। এরপর কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানো উৎসবে অংশ নেয় রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেসনের উপদেষ্টা ও জেলা পরিষদের সদস্য স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা, অমিত চাকমা রাজু, পৌর প্যানাল মেয়র মো. জামাল উদ্দীন, ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেসনের সাধারণ সম্পাদক ঝিনুক ত্রিপুরা।
এসময় দল বেধে চাকমা ও ত্রিপুরা তরুণ-তরুণীরা একে একে কাপ্তাই হ্রদে ফুল বিজুতে অংশ নেয়।
জানা গছে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’ মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ ও চাকমাদের ‘বিজু’ উৎসবের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে নামকরণ করা হয়েছে ‘বৈসাবি’।
চাকমা ও ত্রিপুরারা উৎসবের প্রথম দিনে ছিল সবার মঙ্গল কামনায় কলা পাতায় করে ভক্তিভরে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে ফুল ভাসিয়ে পুরাতন বছরের গ্লানি ভুলে নতুন বছরকে বরণ করা। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে (১৩ এপ্রিল) চাকমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করে আপ্যায়ন করেন। প্রায় ৩০ পদের সবজি দিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ পাজন। তৃতীয় দিন অর্থাৎ নববর্ষের প্রথম দিন মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব শুরু।সকল দুঃখ ও পাপ ধুয়ে দিতে মারমা তরুণ-তরুনীরা একে অপরের দিকে পানি ছুড়ে মেতে উঠেন।
রাঙামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেসনের সাধারণ সম্পাদক ঝিনুক ত্রিপুরা জানান, বাংলা ঋতু চৈত্র মাসের শেষ দিনে আয়োজন করা হয় ফুল বিজুর। পুরাতন বছরে গ্লানি -দুঃখ ভুলে নতুন দিনের মঙ্গল কামনায় গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে নদীতে ভাসানো হয়। এ ভাবে নতুন বছরকে বরণ করা হয় গোটা পার্বত্যঞ্চলে। তিনি আরও জানান, এ ফুল বিজু উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও রাঙামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ ফাইন্ডেসনের উদ্যোগে সারা দিনব্যপাী নানা কর্মসূচী আয়োজ করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে- ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী গড়ায় নৃত, গান, খেলা বয়োজ্যেষ্ঠ স্লান বস্ত্র দান, পুরুষ্কার বিতরণ ও আলোচনা সভার। এভাবে ক্ষুদ্র নৃৃ-গোষ্ঠীরা আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন