বাগেরহাটে অজ্ঞাত রোগে ‘হোয়াইট গোল্ড’ খ্যাত বাগদা ও গলদা চিংড়ির হাজার-হাজার খামারে মড়ক দেখা দিয়েছে। এতে চিংড়ি চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এভাবে চিংড়ি মরতে থাকলে চাষীরা দারুণ ভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশংকা করছেন তারা। গত দুই সপ্তাহ ধরে বাগেরহাট জেলার কয়েক হাজার চিংড়ি খামারে হঠাৎ করে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। প্রতিদিনই এর সংখ্যা বাড়ছে। মৌসুমের শুরুতেই জেলার অধিকাংশ উপজেলাতে খামারের চিংড়িতে মড়ক লেগেছে বলে চাষী ও জেলা চিংড়ি চাষী সমিতি দাবী করেছে। জেলার অধিকাংশ খামারে চিংড়িতে মড়ক দেখা দিলেও চাষীদের তা প্রতিকারে কোন পরামর্শ দিতে এগিয়ে আসেনি বলে সংশ্লিষ্ট মৎস্য বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন চাষীরা। তবে কি রোগে খামারে বাগদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেনা মৎস্য বিভাগ। তারা আক্রান্ত বাগদা চিংড়ি সংগ্রহ করে রোগ নির্ণয়ের জন্য তা পরীক্ষাগারে পাঠাচ্ছে।
হিসেব অনুযায়ী এ বছর বাগেরহাটের নয়টি উপজেলায় ৭০ হাজার চিংড়ি খামারে বাগদা চিংড়ির চাষ করা হয়েছে। বাগেরহাট জেলায় এবছর বাগদা চিংড়ির বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছিলো ১৫ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন। উৎপাদিত এই চিংড়ির অধিকাংশই রপ্তানী হয় বিভিন্ন দেশে। একারণে বাগেরহাটে হাজার- হাজার চিংড়ি খামারে অজ্ঞাত রোগে চিংড়িশুন্য হয়ে পড়ায় এবার রপ্তানী লক্ষ্যমাত্র পুরণ না হবার আশংকা দেখা দিয়েছে।
ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে চিংড়ি খামার প্রস্তুত করে চাষীরা বাগদার পোনা ছাড়তে শুরু করেন। অধিকাংশ ঘেরের বাগদা চিংড়ি ইতিমধ্যে ৬৬ গ্রেডের হয়ে গেছে। এই চিংড়ি জৈষ্ঠ্য মাসে চাষীরা ধরে তা বাজারে বিক্রি করে থাকেন। মৌসুমের শুরুতে চিংড়িতে মড়ক দেখা দেয়ায় চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন চলতি বছরে লাভতো দুরের কথা অধিকাংশ চাষীকে দেনাগ্রস্থ হতে হবে বলে আশংকা করছেন জেলা চিংড়ি চাষী সমিতি। এই বিপর্যয় কাটাতে চাষীদের মাছ চাষে রাখতে সরকারকে সুদমুক্ত লোন দেয়ার দাবী জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ সকালে সরেজমিন ঘুওে দেখা গেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ও ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের খোন্তাকাটা ও শশীখালীর বিলের অধিকাংশ চিংড়ি খামারের বাগদা চিংড়ি মরে রয়েছে। কোন কোন চাষী তার খামারে পানিতে নেমে মরা চিংড়ি তুলে উপরে ফেলে দিচ্ছেন। আবার অনেকে হতাশ হয়ে পানিতে নামছেন না। মরে যাওয়া চিংড়িতে লাল ও হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। জেলার অধিকাংশ উপজেলায় মাছের চিংড়ি খামারে বর্তমানে একই অবস্থা বিরাজ করছে।
চাষীরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে চিংড়ি খামার (ঘের ) প্রস্তুত করে আমরা বাগদার পোনা ছাড়তে শুরু করি। অধিকাংশ ঘেরের বাগদা চিংড়ি ইতিমধ্যে ৬৬ গ্রেডের হয়ে গেছে। এই চিংড়ি জৈষ্ঠ্য মাসে ধরে বাজারে বিক্রি করা শুরু করি। হঠাৎ করে বাগদা চিংড়ি মরতে শুরু করে। ঘেরে নেমে আমরা বাগদা চিংড়ি দেখতে পাচ্ছিনা। তবে কি কারনে ঘেরের বাগদা চিংড়ি মরছে তা তারা বলতে পারছেন না। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। নতুন করে তারা আবার মাছ ছাড়বেন সেই টাকা তাদের কাছে নেই। মাছ মরে যাওয়ার কারনে দেনাগ্রস্থ হয়ে পড়বেন বলে তারা আশংকা করছেন।
বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাটে হাজার- হাজার চিংড়ি খামারে (ঘেরে) অজ্ঞাত রোগে চিংড়িশুন্য হয়ে পড়ায় এবার রপ্তানী লক্ষ্যমাত্র পুরণ না হবার আশংকা দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলা, রামপাল, মংলা, মোরেলগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ ঘেরের বাগদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে। এবার মড়ক লাগার বিষয়ে কোন ঘের মালিক কোন কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। এতে হাজার হাজার চাষি দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতিরমুখে পড়েছেন। জেলার অধিকাংশ চাষীরা চড়া সুদ ও ব্যাংকের ঝণ নিয়ে চিংড়ি করে থাকে। মৌসুমের শুরুতে এমন বিপর্যয় চাষীকে সর্বশান্ত করবে। তাই এইসব চাষীদের তালিকা তৈরি করে সরকারকে সুদমুক্ত ঝণ দেয়ার দাবী জানিয়ে তিনি বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে এবার জেলায় চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার চার ভাগের এক ভাগও উৎপাদন হবেনা।
বাগেরহাট মৎস্য বিভাগের বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) জিয়া হায়দার বলেন, মৌসুমের শুরুতে এই এলাকায় বৃষ্টিপাত অনেক কম ছিলো । অনাবৃষ্টি ও ঘেরগুলোতে যে পরিমাণ পানি থাকার দরকার তা ছিলোনা। আবার হঠাৎ করে অতিবৃষ্টির ফলে প্রচন্ড তাপদহে ও তাপমাত্রা কমে পানি অক্সিজেন কমে যায়। তাই বাগদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে। এতে চাষীরা আর্থিক ক্ষতিরমুখে পড়ছেন। তারপরও আমরা মারা যাওয়া চিংড়ি পরিক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এই অবস্থায় আশংকা দেখা দিয়েছে রপ্তানী লক্ষ্যমাত্রা পুরণে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার
