সমুদ্র উপকূলীয় কলাপাড়ায় “মাতৃসদন সার্জিক্যাল ক্লিনিক” চালু হয়েছে। গর্ভবতি মায়েদের স্বাস্থ্য সমস্যা, সন্তান প্রসবকালীন সময়ে অস্ত্রপচারের জন্য এখন পটুয়াখালী, বরিশাল কিংবা ঢাকায় যেতে হবে না। সাগর পাড়ের অবহেলিত জনপদের জেলে, দরিদ্র শ্রেণীর পরিবারসহ সাধারণ মানুষ এ চিকিৎসা সেবা কেন্দটিতে চিকিৎসা করাতে পারবে।
দুঃস্থ, দরিদ্র ও স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত মা ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য এই প্রথম বারের মত উপজেলার মৎস্য বন্দর মহিপুরে দেশের বিখ্যাত প্রসূতি, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সার্জন ডাত্তার নাঈমা কবীর এ চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রটি চালু করেন।
জানা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ডাক্তার নাঈমা কবীরের উদ্যোগে উপকূলী পাথরঘাটা, বামনা, আমতলী, তালতলী, কাউখালী, মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া, কাঠালিয়া মোড়লগঞ্জ উপজেলায় এ ধরণের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পরিচালিত করেছেন।
শুক্রবার শেষ বিকালে উপজেলার মহিপুর বন্দরে “মাতৃসদন সার্জিক্যাল ক্লিনিক” উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব তালুকদার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার ও কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা।
এছাড়া প্রজন্ম-৭১ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা’র সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন মাননু, মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম আকন, মহিপুর প্রেস ক্লাব সভাপতি মো.হাবিবুল্লাহ খান রাব্বি প্রমুখ। মাতৃসদন সার্জিক্যাল ক্লিনিক উদ্বোধনী সভায় এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ ও গনমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
কুয়াকাটা সংলগ্ন পশ্চিম খাজুরা গ্রামের ফেরদৌসি বেগম জানান, ‘মা ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য এরকম একটা সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ায় আমাগো উপকার হইছে। মা ও শিশু স্বাস্থ্যের চিকিৎসার জন্য আমরা আগে দুরে যাইতাম। এতে অর্থ খরচ আর কষ্টও হইত। এখানে চিকিৎসা নিলে আমাগো অর্থ খরচ এবং কষ্ট কম হইবে।’
কলাপাড়া পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ‘তৃনমূল পর্যায়ে গিয়ে গরীব-দুঃস্থ মানুষের সেবা করার লোক পাওয়া যায়না। সেদিক থেকে চিন্তা করলে নাঈমা কবীর অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ সেবা কেন্দ্রটি সাধারণ মানুষের সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।’
মাতৃ সদন সার্জিক্যাল ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাঈমা কবীর সাংবাদিকদের জানান, ‘এই অঞ্চলের নারীরা অনেক বেশী রক্ষনশীল তাই আমরা সম্পূর্ন মহিলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সেবিকাদের দ্বারা অস্ত্রপচার ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ মানসম্পন্ন চিকিৎসা প্রদান করা, গর্ভকালীন জরুরী, সময়োপযোগী চিকিৎসার প্রয়োজনে গর্ভবতি মায়েদের তালিকা তৈরি করে সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে আমরা অগ্রসর ভূমিকা রাখতে চাই। এমনকি গর্ভবতি মায়েদের সন্তান প্রসবের সময় প্রয়োজনে আমরা তাৎক্ষনিক নিরাপদ রক্ত দানের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করব। ’
তিনি আরও বলেন, ‘গর্ভফুলের নিম্নাবস্থান, জড়ায়ুতে বাচ্চার আড়াআড়ি অবস্থান, গর্ভকালীন খিচুনি, উচ্চ রক্তচাপ, বাচ্চার গর্ভকালীন সঠিক অবস্থান নির্ণয়, গর্ভকালীন বাচ্চার অপুষ্টি ইত্যাদি চিহ্নিত করে মাতৃ মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে এ সেবা কেন্দ্র ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। অদূর ভবিষ্যতে এ সেবা কেন্দ্রটি আরো প্রসারিত করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।’
বিডি প্রতিদিন/ ১৩ মে, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-৬