নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জামাত-শিবিরের পক্ষে প্রচারণা না করায় হেনা আক্তার (১৫) নামে এক ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে হাত-পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি ঐ স্কুল ছাত্রীকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে পুরো নির্যাতনের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুর্নবাসন কেন্দ্র এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় স্কুল ছাত্রীর হেনা আক্তারের মা কুলসুম বেগম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও থানা পুলিশ উল্টো স্কুল ছাত্রীর মাকে নির্যাতনকারী জামায়াত কর্মী শিক্ষিকা হালিমা খাতুন ও তার স্বামী তাইজুল ইসলামের সাথে আপোষ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ করেছেন মা কুলসুম বেগম।
অভিযোগ উঠেছে নির্যাতনকারীরা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে ম্যানেজ করেছে। এতে পুলিশ উল্টো মামলা না করার জন্য নির্যাতিত শিক্ষার্থীর পরিবারকে অব্যাহত চাপ দিয়ে আসছে। এছাড়া এ ব্যপারে বারাবারি করলে হেনাসহ পরিবারের লোকজনকে এলাকা থেকে বের করে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেয় জামায়াত কর্মী হালিমা ও তার স্বামী।
স্কুল ছাত্রীর মা কুলসুম বেগম জানান, চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্রের ২ নং ওয়ার্ডে তার তার ছেলে মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবত বসবাস করে আসছেন। তার স্বামী মোঃ আনক মিয়া বাসের হেলপার। মেয়ে হেনা আক্তার ডেমরা এলাকার বাওয়ানী উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করে আসছে। চনপাড়া ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও জনকল্যাণ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হালিমা খাতুনকে তার গৃহ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। ঐ শিক্ষিকার স্বামী ডাঃ তাজুল ইসলাম, ভাই আব্দুল মান্নান মনা, আছিয়াসহ তাদের লোকজন বিভিন্ন সময়ে জামাত-শিবিরের কর্মকান্ড নিয়ে এলাকায় গোপনে প্রচার-প্রচারণা করে থাকেন। আর এ প্রচার-প্রচারণায় প্রায় সময়ই হেনা আক্তারকে সাথে নিতো। না গেলেই বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন চালানো হতো।
গত সোমবার সকালে হেনা আক্তারকে জামাত-শিবিরের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রচারণায় যেতে বললে তাৎক্ষনিক যেতে পারবেনা বলে জানিয়ে দেয়া হয় হেনা। পরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় হালিমা খাতুন, ডাঃ তাজুল ইসলাম, তার ভাই আব্দুল মান্নান (মনা), ভাবী আছিয়াসহ তাদের লোকজন। পরে ঐ ছাত্রীকে বাড়ির ভিতরে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে বেত ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পুরো শরীরে জখম করে। বার বার নির্যাতনকারীদের হাতে-পায়ে ধরলেও মাফ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, হাত-পা বেধে নির্যাতনের ঘটনা ফেইসবুকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় পরিবারের সদস্যরা হেনা আক্তারকে উদ্ধার করা হয়।
এদিকে, অভিযোগ রয়েছে নির্যাতনকারীরা স্থানীয় চনপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সাজাউল ইসলামকে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে ম্যানেজ করে। পরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা হেনা আক্তারের পরিবারকে মামলা না করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় কায়েতপাড়া ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার বিউটি আক্তার কুটির অফিসে একটি সালিশ বৈঠকে নির্যাতনকারী সহকারী শিক্ষিকা হালিমা ও তার স্বামী হোমিও ডাক্তার জামায়াত কর্মী তাইজুলকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে স্কুল ছাত্রীর মা এ বিচার প্রত্যাখান করে চলে যায়।
এ ব্যপারে অভিযুক্ত হালিমা খাতুন, ডাঃ তাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা হাত-পা বেধে নির্যাতনের ঘটনা স্বীকার করেছেন। তবে, এটাকে শাসনমুলক শাস্তি বলে তারা দাবি করেছেন। এ ঘটনায় মহিলা মেম্বার বিউটি আক্তার কুট্রি বলেন, এ ধরনের একটি ঘটনা শুনেছি তবে টাকা পয়সার লেনদেনের বিষয় আমার জানা নাই। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, এধরনের কোন অভিযোগ আমি পাইনি, পেলে ব্যবস্থা নিব।
বিডি প্রতিদিন/১৩ জুন ২০১৭/হিমেল