সত্তরের দশক পর্যন্ত রাজশাহীর পদ্মা নদীতে মিলত ঝাঁক ঝাঁক ইলিশ। আকারে বড় ও স্বাদে অতুলনীয়, দামে কম ও সহজলভ্য হওয়ায় সবার নাগালে ছিল। পদ্মার উজানে ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার পর প্রবাহ যেমন কমেছে, নদীতে ইলিশের পরিমাণও কমতে থাকে; যা এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। তবে পদ্মার পানির গভীরতা বাড়ানো গেলে ও মা ইলিশ ধরা বন্ধ করলে আবারও ইলিশের সুদিন ফেরানো সম্ভব মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, বঙ্গোপসাগর থেকে উজানে রাজশাহী হয়ে ভাগলপুর পর্যন্ত যেত ইলিশ এবং ডিম ছাড়ত। ফারাক্কায় বাঁধ দেওয়ার পর রাজশাহীতে ইলিশ কমতে থাকে। বাঁধের কারণে পদ্মায় প্রবাহ কমে যাওয়ায় স্রোতও কমে যায়। ফলে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ অতিক্রম করে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসা বন্ধ হয়ে যায়।
নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী জানান, ‘রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ থেকে ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার এলাকা পদ্মা নদী থেকে ভারতের ভিতরে চলে গেছে। ফলে বাংলাদেশের অংশে মা ইলিশ ও জাটকা ধরা বন্ধ থাকলেও ভারতের দিকে তা উন্মুক্ত থাকছে। এজন্য রাজশাহীতে ইলিশ কমছে।’
গত সাত অর্থবছরে আহরণের হার লক্ষ করলে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে ৭৪১ টন ইলিশ আহরণ করা গেছে, সেখানে গত অর্থবছরে কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘আগের বছরগুলোর তুলনায় ইলিশ আহরণ কমেছে। এখন ইলিশ সেভাবে নিচু এলাকা থেকে উজানে আসে না। নদীর গভীরতা কমে যাওয়া, বাঁধ দেওয়া, ড্রেজিংয়ে পানি ঘোলা হয়ে যাওয়া, তীব্র শব্দের কারণে ইলিশ আসা কমে গেছে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ইয়ামিন হোসাইন বলেন, ‘পদ্মায় ইলিশ পেতে হলে কমপক্ষে দুই মৌসুম সব নদী ও সাগরে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এজন্য প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনাও জরুরি।’