দেশের বেশ কিছু অঞ্চল যখন বন্যার পানিতে ভাসছে তখন আবহাওয়া পূর্বাভাসের উল্টোটাই ঘটছে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। এই জেলায় ভরা বর্ষাতেও বৃষ্টির দেখা নেই। গত ১৫ দিন ধরে বৃষ্টিপাত শূন্য খরার প্রভাব পড়েছে রোপা আমন চাষাবাদে। এদিকে প্রচণ্ড খরতাপে অতীষ্ট হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। গরমে হাঁসফাস করছে প্রাণীকুল।
দিনপঞ্জি অনুযায়ী আষাঢ়-শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল। কিন্তু আষাঢ় মাস পেরিয়ে শ্রাবণ পেরোতে থাকলেও পঞ্চগড়ে তেমন বৃষ্টিপাত হচ্ছেনা। প্রকৃতির এমন বিরুপ আচরণের ফলে রোপা আমন চাষাবাদের ভরা মৌসুমেও কৃষকরা ধানের চারা রোপন করতে পারছেন না। অনেক কৃষক আগাম আবাদের জন্য বীজতলা চারা প্রস্তুত করলেও সেই চারা বীজতলাতেই নষ্ট হতে বসেছে। তবে কেউ কেউ শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপন করছেন। অন্যদিকে কাজ কামের সংকটে পড়েছে কৃষি শ্রমিকরা। বসে বসে সময় পার করছেন তারা। জমানো টাকা খরচ করে টানাটানির মধ্যে তাদের সংসার চলছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, এবার জেলায় প্রায় ৯৬ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন লাগানো শেষ হলেও ভরা বর্ষাকালে জেলায় পরিমিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আমন চাষীরা। তাই এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জমিতে চাষ দিয়ে রাখলেও পানির অভাবে চারা রোপন করতে পারছেন কৃষক। শ্রাবণের শুরুতেও তেমন বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় হতাশ তারা।
কৃষকরা জানিয়েছেন, জেলায় সাধারণত মধ্য আষাঢ় থেকে শুরু করে শ্রাবন মাস পর্যন্ত আমন ধানের চারা জমিতে রোপন করা হয়। কিন্তু এবার তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকরা আমন চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
মূলত বর্ষাকালে বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে কৃষকরা প্রকৃতিনির্ভর রোপা আমন চাষ করে থাকে। কিন্তু এবার আষাঢ়ের শুরু থেকেই প্রায় বৃষ্টিহীন এই অঞ্চল। মাঝে মধ্যে হালকা বৃষ্টিপাত হলেও সেই পানি জমিতে লেগে থাকেনি। এতে করে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে পানি না জমায় সেই জমি এখনও পতিত পড়ে আছে। সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অনেকের বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে। কারো কারো বীজতলায় চারা তৈরি থাকলেও পানির অভাবে সেই চারা জমিতে লাগাতে পারছে না। সাধারণত বীজতলায় তৈরী হওয়া চারা ২৫-৩০ দিনের মধ্যে জমিতে লাগানো হয়। কিন্তু অনেক কৃষকের চারার বয়স দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই অতিরিক্ত খরচ করে শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে পানি দিয়ে চারা লাগানোর কাজ শুরু করেছেন। অন্যদিকে আগাছা প্রতিরোধের জন্য আমন ক্ষেতে ৪ ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হচ্ছে। এসব কারণে কৃষকের খরচ হচ্ছে দ্বিগুণ। সদর উপজেলার হাড়িভাষা এলাকার কৃষক আব্দুর রহমান ও মানিক খা জানান, খরার জন্য আমনের চারা মরে গেছে। এখন আবারও আমন চারা কিনে রোপন করতে হবে। বর্তমানে স্যালো মেশিন দিয়ে রোপন করা চারা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। শ্যালো মেশিন দিয়ে আমন চাষাবাদ করতে হলে খরচ হবে দ্বিগুণ। কৃষকের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যাবে।
এদিকে বৃষ্টিপাত না হলে খরায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি রোপা আমনের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন