পরকীয়া প্রেমের কারণে স্ত্রী ও প্রেমিকের পরিকল্পনায় এক যুবককে নৃশংসভাবে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে নিহতের স্ত্রীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো একছর কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। একইসাথে জেসমিন সুলতানার প্রেমিক মনিরুজ্জামান মুকুলের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. আব্দুল হামিদ এক জনাকীর্ন আদালতে এ রায় দেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গৌরীপুর ধাপুয়ার চক গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে পরানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মনিরুজ্জামান মুকুল (৪২) ও নিহত জাকির হোসেন মুকুলের স্ত্রী জেসমিন সুলতানা (৩৪)।
মামলার বিবরণে জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার গৌরীপুর গ্রামের কেরামত আলী গাজীর ছেলে জাকির হোসেন মুকুল উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে মোহরার হিসেবে কাজ করতো। বাড়ির পাশে কুলটুপি মৌজায় তার সাড়ে তিন বিঘার একটি মাছের ঘের ছিল। একই এলাকার জোহর আলী তার ঘেরের পাহারাদা দিতেন। বন্ধুত্বের জের ধরে সন্তানকে নিয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা করার সুবাদে জাকিরের স্ত্রী জেসমিন সুলতানার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে পরানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মনিুরুজ্জামান মুকুল। বেশ কয়েক মাস অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পর মনিরুজ্জামান মুকুলকে বিয়ের জন্য বলে জেসমিন সুলতানা। এক স্ত্রীর দু’স্বামী থাকতে পারে না জেসমিনের এমন বক্তব্যের কারণে মনিরুজ্জামান মুকুল পরিকল্পনা করে জাকির হোসেন মুকুলকে হত্যার।
মামলার বিবরণে আরো জানা যায়, ২০০৭ সালের ৮ জুন রাত ৯টার দিকে জাকির হোসেন মুকুল বাড়ি থেকে ভাত খেয়ে নিজের মাছের ঘেরে যায়। সেখানে পাহারাদার জোহর আলীকে ঘেরের বাসায় রেখে সে বাড়িতে ফিরে আসছিল। পথিমধ্যে মঠবাড়ির শহীদ মিস্ত্রীর মাছের ঘেরের উত্তর পশ্চিম পাশে রাত পৌনে ১০ টার দিকে তাকে নির্যাতন চালিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে তার লাশ কাদার মধ্যে ফেলে রাখা হয়। অধিক রাতে জনৈক জবেদ আলী মিস্ত্রী ও ফকির মিস্ত্রীর ডাক চিৎকারে খবর পেয়ে জাকির হোসেন মুকুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের পিতা কেরামত আলী গাজী বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে পরদিন শ্যামনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে পুলিশ জেসমিন সুলতানাকে গ্রেফতার করে। জেসমিন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট হেমায়েত হোসেনের কাছে নিজেকে স্বামী হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে জাকির হোসেন মুকুলকে হত্যার জন্য ২০ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়াটিয়া গুন্ডা হিসেবে জবেদ আলী, ওসমান, ওমর আলী ও রেজাউল ইসলামকে নিয়োগ করে মনিরুজ্জামান মুকুল বলে উল্লেখ করা হয়।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক মোঃ হযরত আলী ২০০৭ সালের ২৪ নভেম্বর সাজাপ্রাপ্ত দু’জনসহ শ্যামনগর উপজেলার গৌরীপুর গ্রামের ফকির আহম্মেদ মিস্ত্রীর ছেলে জবেদ আলী মিস্ত্রী (৪৬), কালাম মিস্ত্রীর ছেলে ওসমান মিস্ত্রী (৫০), তার ভাই ওমর ফারুক মিস্ত্রী (৫৮), সোলায়মান মিস্ত্রীর ছেলে রেজাউল ইসলাম (৪২), গনি গাজীর ছেলে মনিরুল ইসলাম(৩৫) ও কালিগঞ্জ উপজেলার খড়িতলা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে শহীদ সরদার(৫০) এর নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলার নথি ও ১৩ জন সাক্ষীর জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে বিচারক জনকে দোষী সাব্যস্ত করে উপরোক্ত রায় ঘোষণা করেন। নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় জবেদ আলী মিস্ত্রী, ওসমান মিস্ত্রী, ফারুক মিস্ত্রী, রেজাউল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম ও শহীদ সরদারকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন।
মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. আব্দুল মজিদ(১), অ্যাড. সৈয়দ ইফতেখার আলী, অ্যাড, আবু বক্কর ছিদ্দিক, অ্যাড. এস এম হায়দার আলী। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালণা করেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. সৈয়দ জিয়াউর রহমান জিয়া।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার