সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যায় অনেক ফসলি জমি প্লাবিত হয়। পানির নিচে ডুবে থাকে কয়েক হাজার ধানের চারা। সেই সকল ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার ফসলি জমি পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের পাশে সরকার রয়েছেন বলে তাদের অনুপ্রাণিত করতে কৃষকের সাথে তিনি নিজেই কাঁদা মাখা ক্ষেতে ধানের চারা রোপন করেছেন।
কৃষকের সাথে কাঁদা মাটিতে জেলা প্রশাসক ধানের চারা রোপন করায় এলাকার সাধারণ কৃষক অবাক হয়েছেন।
ওই সময় ডিসি সাহেব নিজে ধান লাগাচ্ছেন এ কথা শুনে তাকে দেখার জন্য আশে পাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ ছুটে আসেন।
কৃষকের সাথে জেলা প্রশাসকের ধানের চারা লাগানোর সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়ার পরেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।
কৃষকের সাথে কাঁদা মাটিতে চারা রোপন করার ইচ্ছে কেন হল এমন প্রশ্ন করলে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, হঠাৎ বন্যায় ঠাকুরগাঁও জেলার অনেক কৃষকের রোপনকৃত জমি পানিতে প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের নিদের্শনা এসেছে এসময় কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। তাই ক্ষতিগ্রস্থ ও অন্যন্যা কৃষকদের অনুপ্রাণিত করতে তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধানের চারা রোপন করতে মাঠে নেমেছিলাম।
তিনি আরো বলেন, কৃষি প্রধান বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের চাবি বা মেরুদন্ড হচ্ছে- এদেশের কৃষক সমাজ। আদি মানুষের পেশা ছিল কৃষি। আমাদের অধিকাংশ মানুষের বাপ-দাদার পেশাও কৃষি। কৃষির উপরই আমাদের নির্ভরতা। কৃষকের উন্নতি মানে দেশের উন্নতি, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি। কৃষকের ক্ষতি মানে দেশের ক্ষতি। শিল্প উন্নত দেশ গড়তে হলে কৃষির উপকরণ ছাড়া শিল্প কারখানা অচল।
কিন্তু যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা মানব সৃষ্ট দুর্যোগের কারণে কৃষকের সোনার ফসল ও সহায় সম্বল হারিয়ে কৃষক নির্বাক, নিঃস্ব হয়ে পড়েন, তখন হৃদয়বান মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়, কৃষক-কৃষাণীর বেদনার সূর মানব অনুভূতিকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়। মানুষ একে নিয়তির তকদীরের লিখন বলে মানতে বাধ্য হয়। তাই তাদের সামান্য অনুপ্রাণিত করতেই মনের অনুভূতি থেকে মাঠে নেমেছিলাম।
মা, মাটি, দেশ মিলেই আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থা। একজন কৃষক কত কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করেন বর্তমানে সেটি আমরা অনুভব করি না। কেমন জানি আমরা যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।
এ সময় ক্ষেতে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কে এম মাউদুদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বন্যার পানিতে নতুন করে রোপা আমনসহ ৩৭ হাজার ৫শ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
পরে জেলা প্রশাসক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে রয়েছেন বলেও আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন