ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা হাজীপাড়া গ্রামের যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হন আঞ্জুয়ারা বেগম (৩১) নামে এক গৃহবধূ। তিনি এখন ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত ২ নভেম্বর স্বামী আব্দুস সাত্তারসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে বেধড়ক পেটায়।
স্বামী আলমের (৪৫) নির্যাতনের শিকার হয়ে একই হাসপাতালে এবার ভর্তি হয়েছেন আরেক গৃহবধূ মহসিনা (৩৮)
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা রাজাগাঁও ইউনিয়নের চাপাতি গ্রামের মৃত পজির উদ্দিনের ছেলে আলম। শনিবার রাতে তার নির্যাতনের শিকার হয়ে মহসিনা হাসপাতালে ভর্তি হন।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক তোজাম্মেল হোসেন জানান, গৃহবধূর হাতে, পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাছাড়া ওই গৃহবধূ নির্যাতনের ফলে মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন হয়ে গেছে।
মহসিনার খামির উদ্দিন (৬২) জানান, অনুমতি ছাড়াই আলম দ্বিতীয় বিয়ে করলে মহসিনা তা মেনে নিতে পারেনি। ফলে প্রায় সময় মহসিনাকে তার স্বামী আলম শারীরিক, মানসিক ও পাশবিক নির্যাতন করতো। আলম এক সময় নির্যাতনের পরিমাণ বাড়িয়ে আমার মেয়েকে মানসিক রোগী বানিয়ে দেয় ও প্রতিবেশীদের কাছে পাগল বলে প্রচারণা করে। মহসিনা আমার (বাবার) বাড়িতে পালিয়ে আসে। অনেকদিন চিকিৎসার পর সে সুস্থ হয়। এরই মাঝে আলমের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহেরুন বাড়ি থেকে চলে যায়। নাতি-নাতনীদের অনুরোধে কয়েক বছর আগে মহসিনাকে আবার আলমের বাড়িতে পাঠিয়ে দেই।
হঠাৎ গত ১৫ দিন আগে আলম সেই দ্বিতীয় স্ত্রীকে বাড়িতে আবার নিয়ে আসে। এ নিয়ে মহসিনার সাথে চলে আবারো বিরোধ। গত ১০ দিন ধরে ঘরে আটকে রেখে মহসিনাকে নির্যাতন করে আলম। প্রতিবেশীর খবর পেয়ে মহসিনাকে আনতে গেলে আলম রাজি হয়নি। পরে থানায় অভিযোগ করে পুলিশের মাধ্যমে মহসিনাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি।
চাপাতি গ্রামের ইউপি সদস্য তফিজুল ইসলাম বলেন, আলম দীর্ঘদিন ধরে প্রথম স্ত্রীকে নির্যাতন করে আসছে। এ নিয়ে একাধিকবার শালিস বৈঠকে তাকে সর্তক করা হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েদিন ধরে আবারো নির্যাতন শুরু করে। শনিবার থানার মাধ্যমে উদ্ধার করে মহসিনাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া হয়।
হাসপাতালে ভর্তি মহসিনা জানান, আমার স্বামী আমাকে দীর্ঘদিন নির্যাতন করে সবার কাছে পাগল বানিয়ে রেখেছে। সে বিচ্ছেদের পরেও স্ত্রী মেহেরুনকে অন্য স্বামীর ঘর থেকে গোপনে নিজ বাসায় এনেছে। শুক্রবার আমার হাত-পা বেঁধে খুবই মারপিট করে। মাথায় আঘাত করলে অজ্ঞান হয়ে যাই।
গৃহবধূর স্বামী আলম নির্যাতনের কথা স্বীকার করে বলেন, মহসিনা দীর্ঘদিন যাবত পাগল। মাঝে মধ্যে সে পাগলামী করে বাড়ি থেকে চলে যায়। দুই দিন আগে ফোনে আমার বিরুদ্ধে তার বাবার বাড়িতে অভিযোগ করলে কিছুটা মারপিট করি।
দ্বিতীয় স্ত্রী মেহরুনকে অন্য স্বামীর সংসার থেকে গোপনে নিয়ে আসার বিষয়টি জানতে চাইলে আলম এড়িয়ে যায়।
রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার জানান, নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আলমকে থানায় ডেকে পরবর্তীতে নির্যাতনের বিষয়ে সর্তক করে দেওয়া হয়। সে সময় মহসিনাকে চিকিৎসার জন্য মহসিনার বাবা খামির উদ্দিনের কাছে তুলে দেওয়ার কথা বলা হয় আলমকে।
বিডি প্রতিদিন/৫ নভেম্বর, ২০১৭/ফারজানা