ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী হেদায়েতউল্যাহ সাকলায়েন এবং সাধারণ সম্পাদক ফাইজুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা নিয়ে দলের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ নিয়ে দলের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুটি গ্রুপ বর্তমানে মুখোমুখি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে।
দলের বড় একটি অংশ এ বহিষ্কারকে গঠনতন্ত্র বহির্ভূত এবং ক্ষমতার অপব্যবহার হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তাদের বক্তব্য, এতে দলের চরম ক্ষতি হবে ও আগামী সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন,চক্রান্তের অংশ হিসেবে দলকে দুর্বল করতেই নির্বাচনের আগে এ বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বহিষ্কারের জন্য দলের একটি অংশ দায়ী করেছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্যাকে। একক সিদ্ধান্তেই বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি তাদের।
অপর একটি অংশ মনে করে, ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিন ধরে থাকা সভাপতি কাজী হেদায়েতউল্যাহ সাকলায়েন এবং সাধারণ সম্পাদক ফায়জুর রহমান স্বেচ্ছাচারিতার কারণে দল অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত সময়পোযুগী।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মীর সাথে আলাপকালে জানা গেছে, একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ। ফলে তার অনুসারী হিসাবে তার চাচাতো ভাই হেদায়েদউল্যাহ সাকলায়েনকে সভাপতি এবং ফায়জুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কাজী সাকলায়েন ১৩ বছর এবং ফায়জুর রহমান ১৮ বছর ধরে সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন।
গত ১১ নভেম্বর ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাদের বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ভাঙ্গা উপজেলা শাখার সভাপতি কাজী হেদায়েতউল্যাহ সাকলায়েন এবং সাধারন সম্পাদক মো. ফায়জুর রহমানের বিরুদ্ধে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ, দুর্নীতি এবং দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের দুইজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলো। তাদের ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন কার্যক্রম বা দায়িত্ব পরিচালনার আর কোন ক্ষমতা বা অধিকার থাকবে না।
একই চিঠিতে বলা হয়েছে, সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করায় এখন থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন ১নং সহ সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান রাজা দায়িত্ব পালন করবেন।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ফায়জুর রহমান জানান, বহিষ্কারের যে চিঠি দেয়া হয়েছে তা জেলার সাধারণ সম্পাদকের একক ক্ষমতায় দেয়া হয়েছে। তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্যাকে খুশি করতেই অবৈধ চিঠি দিয়েছেন। তিনি বলেন, জেলার সাধারণ সম্পাদক ফরিদপুরে ‘জিরো’ অবস্থানে রয়েছেন। আমাদের বহিষ্কার করে তিনি কাজী জাফরউল্যার কাছে ‘হিরো’ সাজতে চাইছেন। জেলার সাধারণ সম্পাদকের স্বৈরাচারী আচরণের বিষয়ে গত ১৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছি। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়, আমি এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেবো।
ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী হেদায়েতউল্যাহ সাকলায়েন বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া কোন বহিষ্কার করা যাবে না এমন কথা বলা হলেও জেলার সাধারণ সম্পাদক অবৈধভাবে বহিষ্কারের চিঠি দিয়েছেন। আমরা তার এ বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত মানি না।
ফরিদপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/১৫ নভেম্বর, ২০১৭/ফারজানা