ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর পৌনে ২টা। খুলনা স্টেশনে তখনো কয়েক হাজার উৎসুক মানুষের ভীড়। ভেঁপু বাজিয়ে এরই মধ্যে চলতে শুরু করেছে খুলনা-কলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন। স্টেশনে দাঁড়িয়ে প্রিয়জনকে বিদায় জানাচ্ছেন অনেকে।
দীর্ঘ ৫২ বছর পর অবশেষে বৃহস্পতিবার থেকে খুলনা-কলকাতা রুটে চালু হলো ট্রেন সার্ভিস ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’। এর ফলে সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে আবারো বন্ধনে জড়ালো দু’পাড়ের মানুষ। ‘বন্ধুত্বের বার্তা’ নিয়ে এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় খুলনা স্টেশনে প্রবেশ করে কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে যাতায়াতের ভোগান্তি যেমন কমবে তেমনি দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বানিজ্যের ক্ষেত্রে তৈরি হবে অনুকুল পরিবেশ।
জানা যায়, খুলনা-কলকাতা প্রথম ট্রেনের যাত্রী হয়েছেন ২৫৩ জন। আর কলকাতা থেকে ট্রেনে চড়ে খুলনায় এসেছেন মাত্র ৫৩ জন যাত্রী। শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত এ ট্রেনে ৪৫৬ জন যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে যাত্রী সংকটের পেছনে অত্যাধিক ভাড়া নির্ধারন ও ইমেগ্রেশন জটিলতার কথা জানালেন অনেকে।
চিকিৎসার জন্য কলকাতাগামী যাত্রী আরিফুল হক জানান, খুলনা থেকে লোকাল ট্রেনে বেনাপোল ও বেনাপোল থেকে বাসে করে কলকাতা পর্যন্ত পৌছাতে ভ্রমন কর মিলিয়ে খরচ হয় ৬শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকা। কিন্তু বন্ধন ট্রেনে ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে। অত্যাধিক ভাড়ার কারনে সাধারণ মানুষ এই ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবে না।
তবে ট্রেনে যাত্রী সংকট থাকলেও উচ্ছ্বাসের ঘাটতি ছিল না খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে ঐতিহাসিক এই ট্রেন চালু সাক্ষী হতে স্টেশনে আসেন কয়েক হাজার মানুষ। প্রত্যাশিত ট্রেন সার্ভিসকে ঘিরে দু’পাড়ের মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রানের উচ্ছ্বাস।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ্জামান জানান, এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। যার জন্য দু’দেশের জনগন দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন। খুলনা থেকে যাত্রীরা যাতায়াত করলেও বেনাপোলে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।এর ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়বে।
এদিকে খুলনা স্টেশনে আগত যাত্রীদের স্বাগত জানান ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। তিনি বলেন, বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন দু’পাড়ের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ও বন্ধন আরো দৃঢ় করবে। আগামীতে খুলনায় কাস্টমস্ ও ইমেগ্রেশন চালুর বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
আর খুলনা স্টেশন মাষ্টার মানিক চন্দ্র সরকার জানান, আপাততঃ ট্রেনের ভাড়া কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেই। আপাতত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দু’দেশের মধ্যে চলাচল করবে ট্রেনটি।
বিডি প্রতিদিন/১৫ নভেম্বর ২০১৭/তাফসীর