নাটোরের লালপুর উপজেলার তিন লাখ অতি দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জন্য রয়েছে একটি মাত্র হাসপাতাল। অথচ এই লাখ লাখ মানুষের জন্য চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন মাত্র জন চিকিৎসক। গত কয়েক মাস ধরে এভাবেই চলছে চিকিৎসা সেবা। মোট ১১ জন ডাক্তারের বরাদ্দ থাকলেও সেবা দিচ্ছেন মাত্র একজন। আর এতে হাসপাতালটিতে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রোগীরা প্রত্যাশিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন। হাসপাতাল ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক রোগী।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ও সমমানের পোস্ট রয়েছে ১১টি। যার দুইজন কর্মরত রয়েছে, অবশিষ্ট ৯টি পোষ্টই শূন্য রয়েছে। এই দুইজনের একজন ডাক্তার মুজিবুল হক সবুজ ফাউন্ডেশনের ট্রেনিংএ বগুড়ায় রয়েছেন। এখন শুধুমাত্র আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
এছাড়াও নিয়োগ দেওয়া ডা. উদয় কুমার, ডা. পলাশ কুমার শাহ ও ডা. আতিয়ার চৌধুরী মেডিকেল অফিসার সংযুক্তিতে ঢাকায় কাজ করছেন। কিন্তু বেতন ভাতা তুলছেন এই হাসপাতালের নামেই। এতে করে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে লালপুরের প্রায় তিন লাখ মানুষ।
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার পর একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ ১১ জন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি আবাসিক মেডিকেল অফিসার ছাড়া ১০ জনের পদ শুন্য রয়েছে। আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে একাই সেবা দিতে হচ্ছে রোগীদের। প্রায় দুই মাস ধরে প্রশাসনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টায় সেবা দিতে গিয়ে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানান হাসপাতালের এই একমাত্র মেডিকেল অফিসার।
ডাক্তার সংকটের কারণে নার্স ও কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মচারীদেরও সব রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। এতে করে ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। অপরদিকে রোগীরাও পাচ্ছেন না প্রত্যাশিত চিকিৎসা সেবা।
সরেজমিন হাসপাতলে গিয়ে দেখা যায়, বেডে শুয়ে আছেন অন্তত ৪০ জন রোগী। তাদের জন্য নেই কোন ডাক্তার। চিকিৎসা নিতে আসা বালিতিতা গ্রামের শাহিনা খাতুন, মারিয়া, সাজদার সহ অনেক রোগী জানান, এই হাসপাতালে শুধু একজন ডাক্তার আছে। যিনি দিনে একথেকে দুইবার ভিজিট করেন। তবে মাঝে মধ্যে এক জন নার্স এসে খোঁজ খবর নেন। ডাক্তার না থাকার কারণে আমরা কাঙ্খিত চিকিৎসা পাচ্ছিনা।
হাসপাতালের কর্তব্যরত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাক জানান, ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিনিয়ত প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী ভর্তি হয়। যদিও হাসপাতালে ৫০ শয্যার, তার পরেও সব সময় হাসপাতালে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি থাকে। তাদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজন ১১ জন মেডিকেল অফিসার সেখানে ৭ জন নিয়োগপ্রাপ্ত থাকলেও একজন ডা. মুজিবুল হক সবুজ ফাউন্ডেশননের ট্রেনিং ও অপরজন ডা. হাফিজ ইকবাল কোর্সে রয়েছেন। এছাড়াও বাকি ৩ জন সংযুক্তিতে ঢাকায় কাজ করছেন। কিন্তু তাদের বেতন ভাতা নিয়মিত এই হাসপাতালের নামেই উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ডাক্তার না থাকায় হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা বস্তুত ভেঙ্গে পড়েছে। হাসপাতালে যে পরিমান রোগী ভর্তি রয়েছে তাদের চিকিৎসা সেবা তার একার পক্ষে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
লালপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনর রশিদ পাপ্পু বলেন, উপজেলায় একটি মাত্র হাসপাতাল তাতে প্রয়োজনীয় ডাক্তার না থাকায় এই অঞ্চলের অসহায় জনগণ চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ডাক্তার নিয়োগের মাধ্যে এই অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসার সমস্যার সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ডাক্তার সংকটের সত্যতা স্বীকার করে নাটোরের সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুল ইসলাম জানান, একজন মেডিকেল অফিসারের পক্ষে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া দুস্বাধ্য বিষয়। সমস্যার বিষয়টা সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে বড়াইগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একজন মেডিকেল অফিসারকে লালপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বদলি করা হয়েছ। তবে তিনিও প্রশিক্ষণের জন্য বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন। অচিরেই আরও দু একজন যোগ দিবেন বলে তিনি জানান।
এদিকে গত সপ্তাহে বড়াইগ্রাম স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মঞ্জুর রহমানকে লালপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বদলি করা হলেও তিনি যোগদানের পর পরই প্রশিক্ষণ নিতে ঢাকায় চলে যান।
বিডি প্রতিদিন/৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/হিমেল