পাহাড়ে জুড়ে এখন আমের সোনালি মুকুলের ছড়াছড়ি। আর এসব মুকুলের চমক সৃষ্টি করছে রাঙামাটির পাহাড়ে। গাছে গাছে সয়লাব এসব মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে আমের মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ মৌ গন্ধ। যে ঘ্রাণ মানুষের মন ও প্রাণকে বিমোহিত করে। পাশাপাশি পাহাড়ে মধু মাসের আগমনী বার্তা শোনাচ্ছে এ মুকুল। আর মাত্র কয়েক মাস পর আমের ফুলগুলো পরিণত হবে আম ফলে। তাই ভেবে আনন্দ ভরছে কৃষকের মন।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, প্রতিবারের মতো এবারও রাঙামাটির বিভিন্ন পাহাড়ে আমের মুকুলের বাম্পার এসেছে। বরকল, বিলাইছড়ি, লংগদু, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বালুখালী, বন্দুভাঙ্গা, সুবলং, কুতুকছড়ি, মৈত্রী নগর, সাপছড়ি, মগবান, জীবতলীসহ বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রামে এবার আমের মুকুল অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে পাহাড়ের আমের উৎপাদন প্রচুর ফলন হওয়ায়, আম চাষের দিকে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।
আবাদিরা বলছে, প্রতিবছর রাঙামাটির পাহাড়ে উৎপাদিত আম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত হয় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কৃষকরা পাহাড়ে বিস্তর আম্রপালির ফলনও পেয়েছেন।
রাঙামাটি উপজেলা সদরের বালুখালী ইউনিয়নের কান্দেবছড়া গ্রামের বাসিন্দা খনা চাকমা জানান, বিগত বছরগুলোতে তার বাগানে ২ লাখ টাকা ঠিকা দরে আম্রপালি বিক্রি করেছেন। তিনি চার বছর আগে মাত্র ১০০টি আম্রপালি চারা লাগিয়ে বাগান করেছেন। গত বছর এক লাখ পেয়েছেন আম্রপালি বিক্রি করে। এবছরও লাখপতি হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
অন্যদিকে, পাহাড়ি এ অ লে আম চাষে লাভজনক ফলন দেখে উদ্যোগী হচ্ছে কৃষকরা। তাই অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে পাহাড়ে পাহাড়ে গড়ে তুলেছে শত শত আম বাগান। রাঙামাটি জেলা প্রতি বছর কি পরিমাণ আমের আবাদ হয় তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান জানা না থাকলে। কৃষি বিভাগের বলছে, রাঙামাটিতে এবছর আমের চাষ হয়েছে ২ হাজার ৯৫৫ হেক্টর অধিক জমিতে।
এব্যাপারে রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষ্ণণ প্রসাদ মল্লিক জানান, কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই গাছে মুকুল দেখা দিতে শুরু করেছে। এখন সময়ের ব্যবধানে তা আরো বাড়ছে। এ বছর গাছে মুকুলের পরিমাণ বেশি। তাই এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং সময় মতো পরিচর্যা হলে চলতি মৌসুমে কৃষকরা আমের আশা অনুরূপ ফলন পাবে।
এদিকে প্রতি বছরের মত এবছরও কৃষকদের অভিযোগ, রাঙামাটি জেলায় প্রতি বছর উৎপাদিত প্রচুর ফলমূল সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে কোল্ডষ্টোরেজ ও আড়ত না থাকায় কৃষকদের বাধ্য হয়ে কষ্টে উৎপাদিত পণ্য পানির দরে বিক্রি করতে হয়। তাই মৌসুমী ফল উৎপাদনের আগেই পার্বত্যা লে হিমাগার স্থাপনের দাবি জানায় কৃষকরা।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার