বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের হঠাৎ ভারী অস্ত্র ও অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ বৃদ্ধির ঘটনায় সীমান্তে জুড়েই সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্ট গার্ড সদস্যরা। ওই এলাকার এ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কক্সাবজারের টেকনাফ সীমান্ত জুড়েই যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবেলায় সর্তক অবস্থানে রয়েছেন তারা।
শুক্রবার দুপুরে টেকনাফ ২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আসাদুজ্জামান চৌধুরী জানান, সীমান্তে যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জবাব দিতে শক্ত ও সর্তক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। মিয়ানমারে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে সীমান্ত জুড়েই বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।
তিনি আরো জানান, এর পাশাপাশি টেকনাফ উপজেলা সীমান্তের হোয়াইক্যং, উনচিপ্রাং, ঝিমংখালী, খারাংখালী, হ্নীলা, লেদা, নোয়াপাড়া, দমদমিয়া, টেকনাফ সদর, নাজির পাড়া, সাবরাং ও শাহপরীর দ্বীপ সংলগ্ন সীমান্তে বসবাসরত নাগরিকদের নাফ নদীতে মাছ ধরা ও চলাচলে সীমাবদ্ধতা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ সকালে টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া নাফ নদীর সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের শক্ত ও সর্তক অবস্থানে থেকে টহল দিতে দেখা গেছে।
এদিকে টেকনাফ কোস্ট গার্ড স্টেশন কমান্ডার লেঃ এম ফয়েজুল ইসলাম মন্ডল জানান, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এ তৎপরতায় সীমান্ত জুড়েই কোস্ট গার্ডও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সীমান্তের নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে দিবারাত্রী কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার রয়েছে বলে জানান তিনি।
সীমান্তে বসবাসকারী মোঃ ইসমাইল জানান, প্রতিদিন গভীর রাতে মিয়ানমার ওপারে এখনো গুলি বর্ষণের শব্দ পাওয়া যায়। অনেকবার গুলি বর্ষণের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। মাঝে মাঝে খুবই ভয়-ভীতির মধ্যে রাত কাটে।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যবাসন বন্ধ করতে মিয়ানমারে আরেকটি নতুন কৌশল বলে জানিয়েছেন টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা আমির হোছেন। তিনি জানান, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বসবাস করুক সেটা চায়না মিয়ানমার সরকার। তারা বারবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের সেদেশ থেকে নিধন করতে চায়। যেসময় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরাতে প্রত্যাবাসনের কাজ শেষ পর্যায়ে ঠিক ওই সময় নতুন করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি তমব্রু সীমান্তের ওপারে হঠাৎ ভারী অস্ত্র ও অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে মিয়ানমার। এতে বোঝা যায় রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফিরে যাক তারা সেটা চায়না। তাছাড়া মিয়ানমারে এখনও সেনারা রোহিঙ্গাদের অত্যাচার চালাচ্ছে, ফলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আসা এখনো বন্ধ হয়নি।
এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক জানান, সীমান্তে ও নাফ নদীতে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সর্তক অবস্থানে রয়েছে। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে, সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশ ভূখন্ডে যদি কোন রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ে তাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেরে আশ্রয় দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে রাখাইন রাজ্য থেকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে পালিয়ে আসে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে আসে আরও ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
বিডি প্রতিদিন/২ মার্চ ২০১৮/হিমেল