২২ এপ্রিল, ২০১৮ ১২:০৬

ধ্বংসের মুখে ধনবাড়ী নওয়াব বাড়ির ঐতিহ্যবাহী দিঘী

মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল:

ধ্বংসের মুখে ধনবাড়ী নওয়াব বাড়ির ঐতিহ্যবাহী দিঘী

ময়লা-আবর্জনায় ঐতিহ্য হারাচ্ছে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী নওয়াব বাড়ির ঐতিহ্যবাহী দিঘীটি। শতাধিক বছরের পুরনো এ দিঘীটির পাড়ে নির্মিত বসতবাড়ির নিত্য ব্যবহার্য আবর্জনা ফেলে ও পয়ঃনিষ্কাশনের পাইপ লাইনের নোংড়া পানিতে দূষিত হচ্ছে পানি। ফলে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে দিঘীটি। ভরাট হয়ে যাচ্ছে দিঘীর তলদেশও। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, ছড়াচ্ছে রোগ-জীবাণু। একসময় এ দিঘীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ হতো, চলতো মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। এখন আর আগের মতো মাছ চাষ হয় না। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনায় দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে দিঘীটির অপরূপ সৌন্দর্য্য।

দিঘী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ধনবাড়ীর নওয়াব বাড়ির দিঘীটি উত্তর টাঙ্গাইলের সবচেয়ে বড় দিঘী। শুষ্ক মৌসুমে সব পুকুরের পানি শুকিয়ে গেলেও এ দিঘীর পানি স্থির থাকে। দিঘীর পাড় ঘেঁষা নওয়াব শাহী জামে মসজিদ। এ মসজিদে প্রতিদিন আসা শতশত দর্শনাথী ও মুসল্লিরা দিঘীর পানিতে অজু-গোসল করে নামাজ আদায় করেন। নিত্যদিনের কাজ সারেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পানি এখন হয়ে গেছে বিবর্ণ। পানি সরবরাহে বিশেষ ভূমিকা রাখা এ দিঘীটা সংরক্ষণ করা না গেলে একদিন ময়লা-আবর্জনায় দিঘীর পানি বিষাক্ত হয়ে পড়বে। ভরাট হয়ে যাবে পুরো অংশই। ফলে হারিয়ে যাবে পুরোনো এ দিঘীর ঐতিহ্য। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৩০ বিঘা জমির উপর এ বিশাল দিঘী। রয়েছে সুন্দর মনোরম শান বাঁধানো ঘাট। এখানে মুসল্লিরা অজু করেন। মসজিদ পরিচালনার জন্যই এ দিঘী নির্মাণ করা হয়েছিল। দিঘীর পাড়েই রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রথম প্রস্তাবক এবং বিটিশ সরকারের মন্ত্রী নবাব বাহাদুর নওয়াব আলী চৌধুরীর বাড়ি (নওয়াব মঞ্জিল), নওয়াব প্যালেস, নওয়াব শাহী জামে মসজিদ ও ভিলা। পাশেই  আফতাবুন্নেছা হাফিজিয়া মাদ্রাসা, নওয়াব ইনস্টিটিউশন, সাকিনা মেমোরিয়াল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, নওয়াব মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আসিয়া হাসান আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজ। 

এ ব্যাপারে মসজিদ দেখতে আসা দর্শনাথী ভাইঘাট আইডিয়াল ডিগ্রী কলেজের মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সুর্বণা ইয়াসমিন বলেন, এ ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য আলাদা জায়গা দরকার। এগুলো দিঘীর পানির সাথে মিশে পানি দূষিত হচ্ছে। সবাই এ দিঘীর পানিতে অজু করে মসজিদে নামাজ পড়ে। ময়লা আবর্জনা ফেলা ঠিক না। একই কলেজের আরেক শিক্ষার্থী শাপলা আক্তার বলেন, এতে দিঘীর ঐতিহ্য ধ্বংসের পাশাপাশি সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।

দর্শনার্থী মানিক সরকার বলেন, ময়লা ফেলার কারণে দিঘীর পানি নোংরা ও অপবিত্র হচ্ছে। এতে পবিবেশও নষ্ট হচ্ছে। রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে। 

দিঘীর পাড়ের বাসিন্দা বিউটি আক্তার বলেন, আমরা এখানে ভাড়া থাকি। বাড়ির মালিক দিঘীর সাথে বাড়ির পানির লাইনের সংযোগ করেছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা মো. বেলাল হোসেন বলেন, এটা খুবই গর্হিত কাজ। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

নওয়াব মঞ্জিলের ম্যানেজার মুকবুল হোসেন বলেন, এ ব্যাপরে আমরা নওয়াব মঞ্জিলের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি যাতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা যায়।   

নওয়াব শাহী জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা ইদ্রিস হোসাইন বলেন, আমার এককভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা সম্ভব না। এ দিঘী পরিষ্কার পরিছন্ন রাখলে পরিবেশও ভালো থাকে। আমি সব সময়ই পরিষ্কার পরিছন্নতার পক্ষে।

ধনবাড়ী পৌরসভার মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন বলেন, এ ব্যপারে আমি কিছু জানি না। তবে আমি যথাযত ব্যবস্থা নেবো। এ দিঘীটা আসলে দেখভাল করে নওয়াব বাড়ি।

 

বিডি প্রতিদিন/২২ এপ্রিল ২০১৮/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর