বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রশে করে হরিণ শিকার ও কাঁকড়া আহরণের দায়ে ৭ জনকে আটক করেছে বনবিভাগ। এদের মধ্যে পাঁচ জন হরিণ শিকারী এবং দুই জন কাঁকড়া জেলে। শনিবার সন্ধ্যা ও গভীর রাতে (১২ মে) শরণখোলা রেঞ্জের স্মার্ট টিমের টহল দল ও জ্ঞানপাড়া টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা শ্যালার চরের মানিকখারী খাল ও চরদুয়ানির বলেশ্বর নদীতে পৃথক দু'টি অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে।
রবিবার সকালে তাদের বাগেরহাট আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আটক শিকারীরা চিংড়ি হ্যাচারির জন্য সুন্দরবনের লবন পানি সংগ্রহের নামে কৌশলে হরিণ শিকার করছিল বলে বনবিভাগ জানিয়েছে।
এ সময় হরিণ শিকারের কাজে ব্যবহৃত এমভি আল মদিনা-১ নামের একটি কার্গো জাহাজ, ২৩০টি হরিণ ধরা ফাঁদ, ৩০ কেজি হরিণের মাংস, একটি নৌকা, তিনটি দা, একটি কুড়ালসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া জেলেদের কাছ থেকে ১৫টি কাঁকড়া ধরা বাঁশের চাই, ৩০ মিটার কারেন্ট জাল, ১০০ মিটার চরপাটা জাল, একটি নৌকা ও একটি সোলার প্যানেল জব্দ করা হয়।
আটক হরিণ শিকারীরা হলেন খুলনার দাকোপ উপজেলার আমতলা গ্রামের প্রভাস মৃধার ছেলে বিশ্বজিৎ মৃধা (৪২), পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দাসপাড়া গ্রামের আ. রহমানের ছেলে আলামীন (২৩), একই জেলার গলাচিপা উপজেলার চরকাজল গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে হাসান (২৪), ওই উপজেলার ছোট চরকাজল গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে সুমন (২২) ও সাতক্ষীরার আশাসুনি উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের সহিদ সরদারের ছেলে সাইদ সরদার (১৮)।
অপরদিকে, শ্যালার চর এলাকার নীলবাড়িয়া খালে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে কাঁকড়া ও মাছ ধরার সময় বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার কুমলাই গ্রামের সিরাজ শেখের ছেলে রবিউল শেখ (২৯) ও একই গ্রামের মৃত ইমানউদ্দিনের ছেলে সহিদ শেখকে (৬০) আটক করে স্মার্ট টিম।
শরণখোলা স্মার্ট টিম-১ এর টিম লিডার মো. ফারুকুল ইসলাম জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শরণখোলা রেঞ্জের শ্যালার চরের মানিকখালী খালে অভিযান চালিয়ে হরিণ শিকারে প্রস্তুতিকালে একটি কার্গো জাহাজ ও ২০০টি নাইলনের ফাঁদসহ ওই ৫ হরিণ শিকারীকে আটক করা হয়।
অপরদিকে, বনবিভাগের জ্ঞানপাড়া টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরুল আমীন জানান, শনিবার দিনগত রাত ১টার দিকে বলেশ্বর নদীতে নিয়মিত টহলকালে একটি নৌকা দেখতে পেয়ে চ্যালেঞ্জ করা হয়। এ সময় নৌকায় থাকা ৪-৫ জন লোক নৌকাটি চরদুয়ানী নামক স্থানের লোকালয়ে ভিড়িয়ে পালিয়ে যায়। পরে নৌকা তল্লাশি করে ৩০ কেজি হরিণের মাংস, ৩০টি নাইলনের হরিণ ধরা ফাঁদ, ৩টি দা ও একটি কুড়াল জব্দ করা হয়।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মোহাম্মদ হোসেন জানান, জব্দকৃত কার্গো জাহাজটি ঢাকার উত্তরার একটি ফুড লিমিটেড কোম্পানির সিইও'র বলে জানা গেছে। তার মোংলা পোর্ট এলাকায় অবস্থিত চিংড়ি হ্যাচারি রয়েছে। ওই হ্যাচারির জন্য সুন্দরবন থেকে লবন পানি সংগ্রহের নামে কৌশলে তার লোকেরা হরিণ শিকার করছিল। আটকদের বিরুদ্ধে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা দিয়ে বাগেরহাট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/ ১৩ মে ২০১৮/ ওয়াসিফ