বেনাপোল বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা অরো ৫টি চালান উদঘাটন করেছে তদন্তকারী দল। ফিটকিরির ঘোষণা দিয়ে উন্নত মানের শাড়ি ও থ্রী পিছের চালান বন্দর থেকে ইতিপূর্বে খালাশ করে নিয়ে গেছে ফারদিন ট্রেড ইন্টার ন্যাশনাল নামে এই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। বেনাপোল বন্দর চেকপোস্ট কার্গো শাখা ও শুল্কায়ন গ্রুপের কম্পিউটারে এন্ট্রি রয়েছে এই আমদানিকারকের আরো ৫টি চালান।
পণ্য চালানগুলো জিরো প্লাস নামে একজন সিএন্ডএফ এজেন্ট রিসিভ ও বন্দর থেকে খালাশ গ্রহণ করেছে বলে কাস্টমস এর যুগ্ম কমিশনার এহসানুল হক জানিয়েছেন। এ ঘটনায় তাকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠর করা হযেছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে আমদানিকারক ফারদিন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল বন্দরের ৩৪ নাম্বার শেড থেকে ফিটকিরির ঘোষণা দিয়ে ১ ট্রাক ভারতীয় উন্নতমানের শাড়ি-থ্রিপিছ ও কসমেটিকস এর একটি চালান খালাশ করার সময় আটক করে শুল্ক কর্মকর্তারা। আমদানিকারকের নামে ইতিপূর্বে ৫টি চালানে ৫ কোটি টাকার রাজস্ব ফাকির প্রমাণ পেয়েছে কাস্টমস কর্মকর্তরা।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরীর নির্দেশে পণ্যবোঝাই ট্রাকটি আটক করা হয়। শুক্রবার বিকেলে ট্রাকবোঝাই চালানটি শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে রাজস্ব ফাকির ঘটনা উদঘাটন করেছে কাস্টমস কর্মকর্তারা।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা জানান, তদন্তে দেখা যায় সিএন্ডএফ এজেন্ট জিরো প্লাস একজন বড় মাপের শুল্ক ফাঁকিবাজ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বেনাপোলে কোটি কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেয়ার জন্য একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
ঢাকার ফারদিন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে বাংলাদেশি এক আমদানিকারক ভারত থেকে ৩০০ প্যাকেজ (১৫ মেট্রিক টন) ফিটকিরি আমদানির জন্য গত ৪ এপ্রিল ব্যাংকে এলসি খোলেন (এলসি নম্বর-১৮৯১১৮০১০০৫৬)। পণ্য চালানটি নেয় ভারতীয় একটি ট্রাক (ডাব্লিউ-বি-২৩-এ-৩২৭৩) যার মেনিফেস্ট নম্বর-১৮৫৪৭। বেনাপোল কাস্টম হাউসের ইনভেস্টিগেশন রিসার্স ম্যানেজমেন্ট (আইআরএম) টিমের একটি দল বন্দরের ৩৪ নম্বর শেডে (গুদাম) অভিযান চালিয়ে বড় ধরনের শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ধরার পর গোটা বন্দর এলাকায় শাড়াশী অভিযান শুরু হযেছে। আটক পণ্য চালানের মূল্য দেড় কোটি টাকা। তবে এতে ১ কোটি টাকার শুল্ক ফাকি দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আমদানিকারক ও জোর প্লাস সিএন্ডএফ এজেন্ট এর বিরুদ্ধে এ যাবত ৫ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ধরা পড়েছে। অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও ফাঁকিকৃত টাকা সরকারের ঘরে জমা দেয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
তবে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, যশোর থেকে বেশ ক’জন বড় মাপের সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদরা মোবাইলে ফোন করে আটক চালান ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। সরকারী দলের ২/৪ জন হাতে গোনা নেতার ছত্রছায়ায় সিএন্ডএফ এজেন্ট জিরোপ্লাস দীর্ঘদিন ধরে সরকারের মোটা অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি রাজস্ব বোর্ড ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অবহিত করেছেন। এদিকে শুল্ক ফাঁকিবাজরা মোবাইলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের জীবননাশের হুমকি দেয়ায় কাস্টমস অফিসার এসোশিয়েশন আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/১৩ মে ২০১৮/হিমেল