বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার দক্ষিণ মোল্লাপাড়া গ্রামে ধর্ষণের কারণে বাকপ্রতিবন্ধি কিশোরী (১৫) অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার প্রায় ৪ মাস পর মামলা হয়েছে। পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীর মা বাদি হয়ে গত সোমবার ধর্ষকসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন আইনে আগৈলঝাড়া থানায় এই মামলা দায়ের করেন।
আজ মঙ্গলবার বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ধর্ষিতাকে ডাক্তারি পরীক্ষা এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দী দেয়ার জন্য কিশোরীকে প্রেরণ করে পুলিশ। অসহায় ও হতদরিদ্র প্রতিবন্ধি পরিবারটি মামলা পরিচালনার জন্য মানবাধিকার সংগঠন, আইনসহায়তা ও নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মামলার এজাহারে জানা যায়, দক্ষিণ মোল্লাপাড়া গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধি কিশোরীকে নিয়ে তার মা গত ১৪ মার্চ তার মাসির (খালা) বাড়ি বেড়াতে যায়। ওই দিন রাতে বাড়ির পাশে বিমল সরকারের ঘর থেকে টেলিভিশন দেখে কিশোরী বাড়ি ফিরছিল। পথিমধ্যে সুনীল সরকার (৫৫) বাকপ্রতিবন্ধি কিশোরীকে টেনে হিচড়ে তার বসত ঘরের পূর্ব পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পরে এ ঘটনা কাউকে না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখায় ধর্ষক। পরবর্তীতে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরে। বাদি তার মেয়ের কাছে অন্তঃসত্ত্বা বিষয় জানতে চাইলে তাকে ধর্ষণের ঘটনা খুলে বলে। পরবর্তীতে এ ঘটনা ধর্ষক সুনীলের ভাই বিমল সরকার ও তার ছেলে কমল সরকারের কাছে জানান। তারা ওই ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। বিমল সরকার কিশোরীর মাকে ৩শ' টাকা দিয়ে গর্ভপাতের জন্য হুমকি দেয়। হুমকির মুখে বাদি ও তার শ্বাশুড়ি গত ৩ জুন সাহেবের হাট জিজাস মেডিকেল হলের মালিক পল্লী চিকিৎসক বাদল চক্রবর্তীর কাছে নিয়ে যায়। বাদল চক্রবর্তী ওষুধের মাধ্যমে ৪ জুন তার গর্ভপাত ঘটায়।
এতে রক্তক্ষরণ হলে কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওই ঘটনা রত্নপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য চিত্ত সমদ্দার, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য লিলি হাওলাদার, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন হাওলাদারসহ অন্যান্যদের জানায়। পরবর্তীতে স্থানীয় মিরন চৌধুরীর বাড়িতে সালিস বৈঠক বসে। সালিশদাররা কিশোরীর পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে চুপ থাকতে বলেন। কিন্তু সালিশ বিচারের ধার্য করা উক্ত টাকা নির্যাতিতার পরিবারকে না দিয়ে ধর্ষক, তার পরিবারবর্গ ও আত্মীয় স্বজন নানা ধরনের ভয়ভীতিসহ জীবন নাশের হুমকি দেয়। এসব ঘটনার বিচারের জন্য ও ধর্ষণের ঘটনার বিস্তারিত এবং সালিশদারদের সিদ্ধান্ত ৫নং রত্নপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তফা সরদারকে কিশোরীর পরিবার জানান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খন্দকার আবুল খায়ের বলেন, ধর্ষিতা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্ধী দিয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, অসহায় পরিবারটিকে সর্বোচ্চ আইনি সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার