ঠাকুরগাঁওয়ের শ্মশানঘাটে লাশ সৎকারে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় ৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদের মধ্য থেকে এক আসামিকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এসব ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গত সোমবার দুপুরে জেলার হরিপুর উপজেলার গেদুরা ইউনিয়নের হাটপুকুর গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর আজ মঙ্গলবার ৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা হলে পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আসামি আবুহুরকে (৩৫) তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করে।
মামলার আসামিরা হলেন হাটপুকুর গ্রামের খালেকের ছেলে মাহাবুব (৪১), বশির উদ্দীন ওরফে ছাটাংয়ের ছেলে মাঠকু (৫০), মৃত খলিলের ছেয়ে আল মামুন (৫০), সেন্নিখুয়ার ছেয়ে করিম (৫০), মোতালেবের ছেলে আবুহুর, হাতিমের ছেলে মো. ময়না (৩০) এবং রায়হান (২৮)। এদের মধ্যে আবুহুরকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, জেলার হরিপুর উপজেলার গেদুরা ইউনিয়নের রাজাদীঘি গ্রামের বিলখা বর্মন রবিবার রাতে মারা যান। পরিবারের লোকজন সোমবার দুপুর ২টার সময় লাশ নিয়ে সৎকারের জন্য নিয়ে যায় হাটপুকুর শ্মশান ঘাটে। এ সময় আবুহুর নামে এক ব্যক্তি ওই শ্মশানঘাটে লাশ সৎকারে বাধা দেয়। এমনকি মৃতদেহ দাফনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পরও মৃতদেহটি নিয়ে টানাহেচড়া করে। লাশ কবরে নামানোর পরে আবার তুলতে বাধ্য করে।
এ সময় লাশের লোকজন ও আবুহুরের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে মৃত বিখলা বর্মনের ছেলে রমেশ ও সমেশ আহত হয়। স্থানীয়রা হরিপুর থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। সেই সময় ঘটনাস্থল থেকে মোতালেব হোসেনের ছেলে আবুহুরকে তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় জানান, আজ মঙ্গলবার এ নিয়ে জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে, এ ঘটনায় আগামীকাল বুধবার (১১ জুলাই) মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক অফিস ঘেরাও করে হিন্দু, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ স্মারকলিপি প্রদান করবে বলে জানা গেছে।
হাটপুকুর শ্মশানঘাটের সাধারণ সম্পাদক বিদেশী রায় জানান, এই শ্মশানঘাটে মোট ২.২৭ একর জমি ছিল। আমাদের বাপ-দাদারা আমাদের জন্মের পূর্ব থেকে এখানেই লাশ সৎকার করে আসছে। গত ২/৩ বছর থেকে এই ভূমিদস্যুরা আমাদের উপর হামলাসহ বিভিন রকম হুমকি দিয়ে অধিকাংশ জমি গ্রাস করে ফেলেছে। আমরা বিভিন্ন সময় থানায় অভিযোগ করা সত্বেও কোন ব্যবস্থা নেননি প্রশাসন। আমরা সকলেই হিন্দু সমাজের লোকজন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। এই অত্যাচারী ও সন্ত্রাসীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
এদিকে, এ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম জে আরিফ বেগকে জানানো হলে তিনি পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ পাঠায় উদ্ভুদ্ধ ঘটনাটি নিয়ন্ত্রণের জন্য। মৃতের লোকজন পুলিশের উপস্থিতিতে লাশ সৎকারের কাজ শুরু করলে আবুহুর ও তার লোকজন আবারো সৎকারে বাধা দেয়। এতে উভয়পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সংঘর্ষে মৃত ব্যক্তির দুই ছেলে রমেশ ও সমেশ গুরুতরভাবে আহত হয়।
এ সময় পুলিশ লাশ সৎকারে বাঁধাদানকারী আবুহুরকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃত আবুহুর হরিপুর উপজেলার হাটপুকুর গ্রামের মৃত আব্দুল মোতালেবের ছেলে।
হরিপুর থানার ওসি রুহুল কুদ্দুস জানান, হিন্দুদের লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার ৭ জনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের হয়েছে। এখন পর্যন্ত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
বিডি-প্রতিদিন/১০ জুলাই, ২০১৮/মাহবুব