ইলিশ শিকারে জেলেরা গভীর সমুদ্রে যাত্রা শুরু করেছে। কেউ সাগরে জাল ফেলছে। কেউ ট্রলার নিয়ে যাত্রা করছে। কেউ সমুদ্র যাওয়ার জন্য জাল বুননের কাজে ব্যস্ত রয়েছে। আবার কেউ কেউ আড়ৎগুলো ধুয়ে মুছে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করছেন। এমন দৃশ্য এখন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মৎস্য বন্দর মহিপুর-আলীপুর কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন আড়ৎ ঘাটে।
তবে মৌসুমের শুরুতে জালে আশানুরুপ ইলিশ ধরা না পরায় অনেক জেলে পরিবারে চলছে হতাশা। এদিকে মহাজনের ঋণের ফাঁদে আটকে পড়েছে উপকূলের শত শত জেলে। তবে সাগরে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে এমন আশায় বুক বেঁধে বসে আছে অনেক জেলে।
বেসরকারি একটি সংস্থার এক জরিপে জানা গেছে, কলাপাড়ায় ৪০টি জেলে গ্রামে ২ হাজার ৫৩৩ টি জেলে পরিবারে ২৭ হাজার ৮৪০ জন সদস্য রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইলিশের প্রজনন ও বংশবিস্তার নানাভাবে বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে সমুদ্র উপকূলীয় নদ-নদীতে কমছে ইলিশের পরিমাণ- এমনটিই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
স্থানীয় জেলে সূত্রে জানা গেছে, জালে দু-একটি ইলিশ ধরা পড়লেও তা চড়া দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। যে কারণে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ইলিশ। এছাড়া জাটকা নিধন, জলবায়ু পরিবর্তন ও অনাবৃষ্টির কারণে সাগর-নদীতে মাছের আকাল দেখা দেয়ায় জেলেদের জীবনে নেমে এসেছে হতাশা। মৎস্যবন্দর মহিপুর-আলীপুরে একাধিক ট্রলার মালিক জানান, তারা প্রত্যেকে মহাজনের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা দাদন নিয়ে ইলিশ শিকারের জন্য সাগরে নেমেছেন। কিন্তু ইলিশের মৌসুম শুরু হলেও তাদের জালে ধরা পড়ছে না মাছ। এখন দাদনের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে তারা হয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তাগ্রস্থ।
জাহাঙ্গির হাওলাদার জানান, মহাজন, ব্যাংক আর বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। এখন ঋণের জালে আটকা পড়েছেন। হঠাৎ করে নদীতে মাছের আকাল দেখা দেয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। মহিপুরের শাহানা মৎস্য আড়তের মালিক ইলিয়াস রেজা বলেন, আড়তে আশানুরুপ মাছ আসছেনা। ফি বছর এমন সময় প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকার মাছ বেচাকেনা করতাম। এবছর করছি পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকার বেচাকেনা।
মহিপুর মুদি দোকানদার আইয়ুব আলী জানান, তার দোকান থেকে যে সকল জেলেরা বাকিতে তৈলসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছেন তারা ফিরে একটি টাকাও পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে দোকানদাররাও পড়েছেন বিপাকে। এখন আর বাকিতে মালামাল দেয়ার সাধ্য তাদের নেই।
কলাপাড়া মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, জুলাইয়ের শেষের দিকে অথবা আগস্টের প্রথম দিকে ইলিশের ডিমের পরিপক্কতা আসবে। আশা করছি তখন ইলিশ উপকূলের দিকে আসতে শুরু করবে। সে সময় জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে।
বিডি প্রতিদিন/১০ জুলাই ২০১৮/হিমেল