রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছের বাম্পার আহরণ হয়েছে। এরই মধ্যে ছাড়িয়েছে রাজস্ব আয়ের রেকর্ড। বৃদ্ধি পেয়েছে সব ধরণের মাছের উৎপাদন। এভাবে মাছ উৎপাদন অব্যাহত থাকলে এবছর রাজস্ব আয় অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করবে বলে মনে করছে মৎস্য কর্মকর্তরা। আর এ সুফল ভোগ করবে- জেলে, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, মৎস্যজীবিসহ ও এ অঞ্চলের মানুষ।
তবে কাপ্তাই হ্রদে মাছের ব্যাপক প্রজনন হলেও আবহাওয়া প্রতিকূলে না থাকার কারণে মাছ উৎপাদনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে বলে অভিযোগ মৎস্যজীবিদের।
রাঙামাটি বিএফডিসি সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলধারা ও বাংলাদেশের প্রধান মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের টানা তিনমাস পর মাছ শিকার শুরু হয়েছে। এতে কর্মচঞ্চলতা ফিরেছে জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীসহ মৎস্যজীবিদের মধ্যে। তিন মাস বেকার থাকার পর আবারও কর্মস্থান ফিরে পাওয়ায় খুশি শ্রমিকরা। শুধু তাই নয় বন্ধকালিন সময়ে কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রকৃতিক প্রজনন হয়েছে চাহিদার অধিক। তাই উৎপাদনও হচ্ছে বাম্পার। সরকারের রাজস্ব খাতে যেমন আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি দেশে মিটা পানির মাছের চাহিদাও মিটছে, আর লাভবান হচ্ছে মৎস্যজীবিরা। এরই মধ্যে জমে উঠেছে মৎস্য ব্যবসা।
এব্যাপারে কথা হয় রাঙামাটি ফিসারি ঘাটের মৎস্য শ্রমিক মো. ইয়াসিন সাথে। তিনি বলেন, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছ উৎপাদন স্বাভাবিক থাকলে মাছের উপর নির্ভরশীল লাখো মানুষের দারিদ্রতা দূর হতে খুব একটা সময় লাগবেনা।
এদিকে তিন মাস পরে নতুন করে কর্মসংস্থান ফিরে পেয়েছে আরেক মৎস্যজীবি মুক্তার হোসেন। তিনি বলেন, ফিসারি সচল থাকলে তারাও সচল থাকবে। কারণ কাপ্তাই হ্রদের মাছের উপর নির্ভরশীল হাজার হাজার মানুষ। এ হ্রদের মাছ অনেক মানুষের দারিদ্রতা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ থাকলে বেকার থাকতে হয় তাদের। তাই হ্রদে মাছ শিকার স্বাভাবিক হওয়াতে খুশি সবাই।
রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের প্রথম দিন মাছ উৎপাদ হয়েছে ১১৭ মেট্টিক টন। আর রাজস্ব আয় প্রায় ১৭লাখ ৫৭হাজার টাকা। মাছের সুষ্ঠু প্রাকৃতিক প্রজনন, বংশ বিস্তারের কারণে তা সম্ভব হয়েছে। এমনভাবে হ্রদে মাছের উৎপাদন অব্যাহত থাকলে অতীতের সব রাজস্ব আয় ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তর।
রাঙামাটি জেলা ব্যবস্থাপক কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খাঁন আসাদ বলেন, গেলো বছর রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের আহরিত মাছের রাজস্ব আয় ছিল ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। চলতি বছর মাছের উৎপাদন স্বাভাবিক থাকলে এ আয় ১৪ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাছাড়া রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ দেশের কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের একটি অন্যতম স্থান। এই হ্রদে প্রতি বছর প্রাকৃতিক প্রজনন কৃত মাছের মধ্যে শতকরা ৩১ ভাগ কাতাল, ১২ ভাগ রুই, শতকরা ৭ ভাগ মৃগেল ও ৫১ ভাগ কালিবাউশের প্রজনন হয়। যা দেশের সামগ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে।
কিন্তু রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে কাঙ্খিত মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও মৎস্য ব্যবসায়ীদের ভাগ্য যেন পরির্বতন হচ্ছেনা কিছুতেই। নেই প্রতিকূল আবহাওয়া। রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার নানা জঠিলতা। তাই হ্রদ থেকে ব্যাপক মাছ আহরণ করেও বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মৎস্য ব্যবসায়ীদের।
এ বিষয়ে রাঙামাটি ফিসারির মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ জানান, প্রথম দিন থেকে কাপ্তাই হ্রদে ব্যাপক মাছ আহরণ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতের কারণে জেলেদের মাছ শিকার করতে একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে গেলে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে। এছাড়া মাছ পরিবহণ ও যানজটের নানা সমস্যার কারণে সময়মত মাছ বাজারজাত করা যাচ্ছেনা। আর সঠিক সময়ে মাছ বিক্রি করতে না পাড়ায় অনেক মাছ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ১মে দেশের সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণসহ কাপ্তাই হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে ৩ মাসের জন্য হ্রদ হতে সব প্রকার মৎস্য আহরণ, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) ও রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। এপর গত ৩১জুলাই মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন