সাতক্ষীরার দুই পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলায় অবশেষে আদালত নির্দোষ হিসেবে শেখ ওবায়দুর রহমান অবেদ আলীকে (৬৬) খালাস দিলেও জেল থেকে জীবিত বের হতে পারেননি তিনি। নিম্ন আদালতের মৃত্যুদণ্ডের আদেশের ১২ বছর পর গত ৬ মাস আগে উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান। কিন্তু সেই খালাসের কাগজ কারাগারে পাঠানোর আগেই গত রবিবার কারাগারেই মারা গেছেন সাতক্ষীরার ব্যবসায়ী বেদ আলী। অবিভাবক শূন্য স্ত্রী এখন তিন সন্তান নিয়ে শোকাহত দিন কাটাচ্ছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার দাবি করেছে পরিবারটি।
ছেলে আশিকুর রহমান শাওন ও অবেদ আলীর ভাই শেখ হাবিবুর রহমান জানায়, ২০০৩ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির কন্সটেবল ফজলুর রহমান ও আ. মোতালেব টহলরত অবস্থায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে সাতক্ষীরা থানায় মামলা দায়ের করে। এ ঘটনায় পুলিশ ১০ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০০৬ সালে নিম্ন আদালত আসামি আবেদ আলী, রায়হানুল ইসলাম ও জাকির হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এছাড়া মামলার আসামি সোয়েবর আলী ও ছাদিক খালাস পান। আর আব্দুস সোবহান, আব্দুস সালেক, মো. শাহীন ও মো. মিলনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এর রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করলে ২০১১ সালে হাইকোর্ট অবেদ আলীকে খালাস দেন। কিন্তু সরকারপক্ষ লিভ টু আপিল করে। চলতি বছরের ১১ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্টের খালাসের রায় বহাল রাখেন। কিন্তু গত ছয় মাসেও ওই রায়ের কপি কারাগারে পৌঁছায়নি। এদিকে ফাঁসির আসামি হিসেবে কনডেম সেলে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে অবেদ আলী দিনে দিনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। রবিবার খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালের কয়েদী সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষ রবিবার রাত ৯টার দিকে আবেদ আলীর লাশ সাতক্ষীরার কুররালির বাড়িতে আনা হয়। আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে পারিবারিক কবর স্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
মেয়ে নিলুফা সুলতানা টুম্পা জানায়, কারাগারে তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে ঠিকমত চিকিৎসা করানো হয়নি। বাবার রক্তের প্রয়োজনে তাকে রক্ত দিতে দেয়া হয়নি।
ছেলে আশিকুর রহমান শাওন জানায়, বাবাকে নির্দোষ প্রমাণিত হতে ১২ বছর লাগলো। আর ৬ মাসেও কারাগারে পৌঁছালো না খালাসের কপি। দীর্ঘদিন কনডেম সেলে থেকেই তার পিতা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এজন্য সে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার দাবি জানিয়েছে বলেছে, তার মত যেন আর কোনো ছেলের নিরাপরাধ বাবাকে এভাবে জীবন দিতে না হয়।
স্ত্রী আমিবয়া খাতুন জানান, বিনা দোষে তার সন্তানরা বাবাহারা হয়েছে। কে দেখবে এখন তাদের?
বিডি-প্রতিদিন/০৮ অক্টোবর, ২০১৮/মাহবুব