‘শেখ হাসিনার অবদান, গৃহহীনদের বাসস্থান’-এ শ্লোগানকে সামনে রেখে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ইউপিতে নির্মাণ করা হয় দহগ্রাম গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প। সিভিআরপি’র এ প্রকল্পে গৃহহীন ৮০টি পরিবারের বসত বাড়ি নির্মাণের মধ্যে ৩০টি বসত বাড়ি নিমার্ণের কাজ আজও শেষ হয়নি। ফলে প্রধানমন্ত্রীর গুচ্ছগ্রাম-২ প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আঙ্গোরপোতা-দহগ্রামের সুবিধাভোগী গৃহহীন ৩০ পরিবার। গুচ্ছগ্রামের নির্মিত ঘরে উঠতে না পারায় ওই পরিবারগুলো মানবেতর কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাটগ্রামের দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা তিন বিঘা করিডোর গেটটি ২০১৩ সালে উন্মুক্ত করে বর্তমান সরকার। ইন্দ্রা-মুজিব চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অবরুদ্ধ জীবনের শুধু মুক্তিই নয়, এ বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের নাগরিক সুবিধা ও জীবনমান উন্নয়নে নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দহগ্রাম-১ গুচ্ছগ্রাম সুবিধাভোগী সংগঠনের সভাপতি সইদুল ইসলাম বলেন, গুচ্ছগ্রাম ২য় পর্যায়ে (সিভিআরপি) প্রকল্পে প্রথমে ৫০টি ও পরে ৩০টি ঘর নিমার্ণের অর্থ বরাদ্দ পায় তৎকালিন ইউএনও নুর কুতুবুল আলম। কিন্তু কোটি টাকা ব্যয়ে দহগ্রাম বড়বাড়ী এলাকায় প্রথম দফায় ৫০টি ঘরের নির্মাণ কাজ কিছুটা ভালো হলেও পরের ৩০টি ঘরের নির্মাণ কাজ দায়সারা ভাবে করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ওই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব ইউএনও নুর কুতুবুল আলমের থাকলেও তিনি ঘরগুলোতে মাটি ভরাটের কাজ দেন স্থানীয় দহগ্রামের মেম্বার সাইদুল ইসলামকে। এসব ঘর নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী। ওই ইউপি সদস্য মাটি ভরাটের কাজ আজও শেষ করতে পারেননি। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহহীনদের বাসস্থান প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামের গৃহহীন ৩০টি পরিবার।
অপরদিকে ইউএনও নুর কুতুবুল আলম ওই প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই কাগজ-কলমে শেষ দেখিয়েছেন। পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত ডিসি হয়ে ঠাকুরগাঁও বদলি হয়েছেন। যে কারণে ওই প্রকল্পের সুবিধা ভোগী ৩০টি গৃহহীন পরিবার আজও আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলোতে উঠতে পারেনি।
ওই প্রকল্পের সুবিধাভোগী আব্দুর ছাত্তার বলেন, আশ্রায়ন প্রকল্পে এসে দেখি ঘরে থাকার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। ঘরের ভিতর শেয়াল কুকুরসহ বিভিন্ন পোকা-মাকরের বসবাস। ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পরে নিজের ঘাম ঝড়ানো আয়ের টাকায় ঘরে মাটি ভরাট করেছি।
গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, 'গরিবের কথা কায় শুনে বাহে। গরিব মানুষ মরুক বা পানিতে ভাসি গেলেও কারও কিছু যায় আসে না। চেয়ারম্যান নিজেই গুচ্ছগ্রামের হামার পাছপাকে বোমা মেশিন বসাইছেন। এলা কাকে বিচার দিমো বাহে?'
পাটগ্রামের সাবেক ইউএনও নুর কুতুবুল আলম এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শেষ করে ঘরগুলোতে মাটি ভরাট করেছি। কিন্তু যার উপর মাটি ভরাটের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তার মুখে শুনেছি সেখান থেকে নাকি মাটি চুরি হয়ে গেছে।
দহগ্রাম ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম জানান, ট্রলি হিসেবে মাটি দিয়েছি। কিন্তু সেই মাটি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলোতে ভরাট সম্পন্ন হয়েছে কি না তা বলতে পাবো না।
পাটগ্রামের বর্তমান ইউএনও আব্দুল করিম বলেন, এখানে আমি আসার মাত্র কয়েক দিন হয়েছে, বিষয়টি সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। তবে সরেজমিনে গিয়ে সেখানকার সমস্যা সমাধান করে সুবিধা ভোগীদের ঘরে উঠার ব্যবস্থা করে দিবেন বলে তিনি জানান।
বিডি প্রতিদিন/৯ অক্টোবর ২০১৮/হিমেল