প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবের পর এবার পাহাড়ে শুরু হয়েছে কঠিন চীবর দানোৎসব। এ উৎসব চলবে মাসব্যাপী। ঢল নামবে দূর-দুরান্ত থেকে আগত অগণিত পূণ্যার্থীসহ পর্যটকদের। কারণ এটা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। তাই কানায় কানায় ভরে যাবে পাহাড়। চলবে মেলাও। সব মিলে পার্বত্যাঞ্চল এখন ভাসছে উৎসবের জোয়ারে। এরই মধ্যে উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে পুরো পার্বত্যাঞ্চল। আসা শুরু হয়েছে পুণ্যার্থীদের।
রাঙামাটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাসব্যাপী বর্ষা অধিষ্ঠান শেষে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথিতে ধর্মীয় মহোৎসবের আয়োজন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে বর্ষা অধিষ্ঠান শুরু হয়ে তা শেষ হয় আশ্বিনী পূর্ণিমায়। এর সঙ্গে সঙ্গেই আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় কঠিন চীবর দানোৎসবের। এ উপলক্ষে প্রবারণা উৎসব পালন করেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় রাঙামাটি বুদ্ধাঙ্কুর বৌদ্ধ বিহারে পঞ্চশীল গ্রহণের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে কঠিন চীবর দান উৎসব। রাঙামাটি বড়ুয়া জনকল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত কঠিন চীবর দানোৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের পালি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. অর্থদর্শী বড়ুয়া। এসময় রাঙামাটি বড়ুয়া জনকল্যাণ সংস্থার সভাপতি ডা. সুপ্রিয় বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া ও কঠিন চীবর দান উৎসবের আহ্বায়ক সনদ কুমার বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষরা সাধু সাধু ধ্বনির মধ্যদিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘকে চীবর দান করেন। এসময় রাঙামাটি ভেদভেদী সংঘরাম বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ ভদন্ত ধর্মকীর্তি মহাথেরো পূর্ণার্থীদের উদ্দেশ্যে ধর্মদেশনা (ধর্মীয় উপদেশ) দেন।
সন্ধ্যায় হাজার প্রদীপ প্রজ্জালন ও রঙিন ফানুস উড়ানোর মধ্যেদিয়ে সমাপ্ত হয় রাঙামাটি বুদ্ধাঙ্কুর বৌদ্ধ বিহারের কঠিন চীবর দানোৎসব।
জানা গেছে, আজ থেকে আড়াই হাজার বছরেরও আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রংকরণসহ তৈরি শেষে বৌদ্ধ সন্যাসীদের গেরুয়া কাপড় (চীবর) গৌতম বুদ্ধকে দান করেছিলেন। প্রতি বছর ভিক্ষুদের বর্ষা অধিষ্ঠান শেষে বিশাখা প্রবর্তিত এ দানকে কঠিন চীবর দানোৎসব পালন করেন বৌদ্ধরা। এবার প্রবারণার সঙ্গে সঙ্গে কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হয়েছে- রাঙামাটি সদরের বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের খারিক্ষ্যং শাক্যবন বিহার, সাপছড়ি ইউনিয়নের বোধিপুর বন বিহার এবং শহরের আসামবস্তীর বুদ্ধাঙ্কুর বৌদ্ধ বিহারে। ১৪-১৫ নভেম্বর সার্বজনিন কঠিন চীবর দানোৎসব আয়োজন করা হবে রাঙামাটি রাজবন বিহারে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন