বড় মেয়ে রক্তশুন্যতায় ভূগছে। স্বামীও বহুদিন অসুস্থ। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে মেয়ের ওষুধ কিনতে গিয়েছিল সদর উপজেলার জোতহাসনা গ্রামের লাভলী বেগম (৩৫)। ফেরার পথে বাড়ির মাত্র এক কিলোমিটার দুরে সড়ক দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়ে ছেলে ইয়াসিন (৭) সহ নিহত হন তিনি। স্বামীর অসুস্থতার কারণে পরিবারের সবাইকে রাখতেন তিনি । তিনি মারা যাওয়ায় তিন মেয়ে এবং অসুস্থ স্বামী এখন পাগলের মতো।
বিয়ের একমাসের মাথায় শশুর বাড়ি থেকে ভাতিজা মনির হোসেন (৬) কে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল চাচা তেঁতুলিয়া উপজেলার গড়িয়াগজ গ্রামের ইউনুস হোসেন (২২) । মমিনপাড়া গ্রামের পিএসসি পরীক্ষার্থী একমাত্র মেয়ে মিমের জন্য নতুন জামাকাপড় নিয়ে ঢাকা থেকে ফিরছিলেন বাবা মোজাম্মেল হোসেন (৪৫) । ঘরে ফেরা হয়নি কারোই। মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনা তাদের জীবন কেড়ে নিয়েছে। মিমের নতুন জামাকাপড় বাবার রক্তে লাল স্তব্দ্ধ হয়ে আছে সে।
শুক্রবার রাত আটটার দিকে বাংলাবান্ধা –পঞ্চগড় মহাসড়কের দশমাইল এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত হয়। গুরুতর আহত হয় কমপক্ষে ১৩ জন। তাদের অনেককেই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যান্য আহতদের প্রার্থমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অন্যান্যরা হলেন সদর উপজেলার শিতলী হাসনা গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে রেজাউল (২২), বোদা উপজেলার উৎকুড়া গ্রামের ছতি চন্দ্রের চেলে অনিত্য (২০), তেঁতুলিয়া উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ওমর আলীর মেয়ে রাহেলা (১০), একই উপজেলার উত্তর কাশেমপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে ফরিদুল ইসলাম (৩৫) গুয়াবাড়ি গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে রাসেল (২০)। আহতদের অবস্থা এখনো আশংকাজনক।
শনিবার সকালে নিহতদের নিজ নিজ এলাকায় দাফন সম্পন্ন হয়। শুক্রবার গভীর রাতে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গ থেকে নিজ নিজ পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এ দুর্ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে নয়, মামলা হচ্ছে মোটরযান আইনে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশ।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার সহ জেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত ১০ জনের পরিবারকে তাৎক্ষনিক ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
পঞ্চগড় নাগরিক কমিটির সভাপতি এরশাদ হোসেন সরকার জানান, ফিটনেস বিহিন লক্কর ঝক্কর গাড়ি এবং বদলি ড্রাইভারদের অসর্তকতার কারণে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। গত তিন মাসে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনার প্রতিবাদে বারবার মানববন্ধন করা হয়েছে। প্রতিবাদ কর্মসূচী করা হয়েছে। কিন্তু কোন কার্যকর উদ্যেগ দেখতে পাওয়া যায়না ।
এদিকে এই দুর্ঘটনার কারণে অনেক পরিবারই নি:শ্ব হয়ে গেছে । অনেক পরিবারের উপার্জনকারীরা নিহত হওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা ।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী মামলা করা যাচ্ছেনা। কারণ এ বিষয়ে কোন কাগজ পত্র এখনো পাইনি। পুরোনে আইনে মামলার পক্রিয়া চলছে।
জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেট এহতেশাম রেজার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবে।
শুক্রবার রাতে পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের দশমাইল নামক স্থানে বাস ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মা ও ছেলেসহ ১০ জন যাত্রী নিহত হয়।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন