পটুয়াখালীর গলাচিপায় রণগোপালদী নদীর পাড়ে সপ্তমী মেলা উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে কালী পূজা ও শিব পূজার মধ্য দিয়ে এ মেলার কার্যক্রম শুরু হয়। ভোর থেকেই ঢাক-ঢোল, শঙ্খসহ বিভিন্ন বাদ্য-বাজনা ও দর্শনার্থীদের মুহূর্মুহূ কলরবে মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। মেলায় অনেক শিশুর বাৎসরিক মাথা মুণ্ডন করা হয়। এছাড়া মেলার কালী মন্দিরে পাঠা বলিদান ও শিব মন্দিরে ধূপ, চিনি ও মিষ্টি সামগ্রী দেয়া হয়। মেলায় রং বেরঙের আকর্ষণীয় বিভিন্ন খেলনার দোকান, পল্লীবাসীদের স্বহস্তে তৈরিকৃত বুনন শিল্পের সামগ্রী, গৃহস্থলীর ব্যবহার্য তৈজস পত্রের পণ্য সামগ্রী, মাটির তৈরি বাসন-কোসনের হরেক রকম দোকান, মিষ্টির দোকান, ফল-ফলাদির দোকান ও বিভিন্ন আইটেমের খাবারের দোকান দেখা যায়।
মেলায় হাজার হাজার দর্শনার্থীদের আগমনের মধ্য দিয়ে মেলাটি তার বিচিত্র রূপ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে শত বছরের ঐতিহ্যের দৃষ্টান্ত হিসেবে আজও স্বগৌরবে প্রাণবন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ঠাঁয় দাড়িয়ে আছে। দেশ-বিদেশ থেকে অনেক দর্শনার্থীরা এখানে এসে তাদের নয়ন জুড়ায় ও আত্মার তুষ্টি লাভ করেন। গভীর রাত পর্যন্ত মেলায় বিভিন্ন দোকানে ক্রেতাদের সমাগম থাকে বলে মেলা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, অর্থের অভাবে মেলার কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। মেলাটির বৃহত্তম আঙ্গিনার অনেক জায়গা আজ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
জায়গার অভাবে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মেলা এক সময়ে কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় সরকারি প্রশাসনিক ও আর্থিক সাহায্যের একান্ত প্রয়োজন। এককালীন ও বাৎসরিক সরকারি অনুদান পেলে মেলার আঙিনার বিস্তৃতি ও মন্দির পুনঃসংস্কারের মধ্য দিয়ে মেলাটি আবার ফিরে পাবে তার পুরনো রূপ।
এ ব্যাপারে মেলার পুরোহিত নিখিল গাঙ্গুলী (৩০) বলেন, প্রতি বছরের মত এবারও মেলা শুরু হয়েছে, তবে নদী ভাঙনের ফলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মেলায় আগত মানুষদের দাঁড়িয়ে থেকে বেশ দুর্ভোগ সহ্য করতে হচ্ছে।
মেলা কমিটির সভাপতি বিমল সমদ্দার বলেন, অনেক বছরের পুরনো মেলা নদী ভাঙ্গনের কারণে মেলার আঙিনা দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে।
মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবু যুগল কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, অচিরেই যদি নদীর পাড়ে গাইড ওয়াল করা হয় তাহলে এই পুরনো দয়াময়ী মন্দিরটি তার ঐতিহ্য ফিরে পাবে।
উক্ত এলাকার বর্তমান ইউপি সদস্য দেবাল সমদ্দার বলেন, দয়াময়ী মেলার আঙ্গিনা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এর আসল চেহারা হারিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন রিয়াদ বলেন, শ্রী শ্রী দয়াময়ী কালী মন্দিরের সংস্কার কাজ অতীব জরুরি বিধায় আমি সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সামান্য কিছু অর্থ জোগাড় করে মন্দিরের সংস্কার ও এ বছরের মেলা উদযাপনের কোন রকম ব্যবস্থা করতে পেরেছি মাত্র। মেলাটি যাতে টিকে থাকতে পারে সেজন্য সরকারের সার্বিক সহযোগিতা প্রার্থনা করছি।
তিনি আরও বলেন, সাংসদ এস.এম শাহজাদার নির্দেশে সব ধরনের প্রশাসনিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে করে সর্বসাধারণ জাতি, ধর্ম, বর্ণ ভুলে গিয়ে নিরাপদে মেলায় যোগদান করে মেলার আনন্দ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে পারবে বলে আশা রাখি।
মেলাটি এ অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ ও ব্যতিক্রমধর্মী উৎসব। এটি এখানকার মানুষের একদিকে দেবতার তুষ্টি লাভের উৎসব অন্যদিকে সর্বসাধারণ তথা বিশেষভাবে শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের কাছে বিপুল আনন্দের খোরাক। ইহলৌকিক ও পরলৌকিক ভাবদর্শন, দেব-দেবীর গুণ কীর্তনের সমন্বয়ে এ যেন এক মিলনমেলা। মানুষের জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল-যথা ধর্ম তথা জয়-মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে বয়সের মধ্যে নয় - এ হচ্ছে এ মেলার শ্বাশত মর্মবাণী-ঐতিহ্যময় ধর্ম ও লৌকিক সাংস্কৃতিক উৎসবের অফুরন্ত উৎস।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা