১৮ এপ্রিল, ২০১৯ ১৬:৪৬

সিআরপিতে নতুন জীবন খুঁজে পেয়েছি : রাসেল

সাভার প্রতিনিধি

সিআরপিতে নতুন জীবন খুঁজে পেয়েছি : রাসেল

একটু ভালো থাকার আশা নিয়ে গাইবান্ধা থেকে পরিবার নিয়ে চালক রাসেল বসতি গড়েছিলেন স্বপ্নের শহর ঢাকাতে। কিন্তু ইট পাথরের কঠিন শহরের বাস্তবতাটা কিছুটা হলেও অজানাই ছিল তার। খেসারত দিতে হয়েছে নির্মম ভাবে। বছরখানেক আগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে তুচ্ছ ঘটনায় বাসের চাকায় তার পা পিষ্ট করে দেয় ঘাতক চালক। 

সেই যন্ত্রণার যুদ্ধ পাড়ি দিতে হয়েছে বছর ধরে। কখনো হাসপাতালের বারান্ধায় আবার আদালতের অমৃসন ঘাসের মেঝেতে। সবশেষ আইনের সুশাসন ও লাখো মানুষের ভালোবাসায় পেয়েছেন ন্যায্য অধিকার। পবর্তীতে তার স্বপ্ন জয়ের সঙ্গী হয়ে কৃত্রিম পা সংযোজনের ব্যবস্থা করে দিল সাভার পক্ষাঘাতগ্রস্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)। আজ সেই স্বপ্ন পুরনের দিন। 

বৃহস্পতিবার সকালে সাভারের সিআরপি’র সহযোগিতায় কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ শফিক এর তত্ত্বাবধানে বিনামূল্যে তার এই কৃত্রিম পা সংযোজন করা হয়। 

রাসেল সরকার গত ১১ এপ্রিল সাভার সিআরপিতে ভর্তি হন। কয়েক দফা ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে আজ এ সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। নতুন পা সংযোজনের জন্য প্রায় চার সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এ সময়ের মধ্যে নতুন পা দিয়ে তার চলাফেরাসহ দৈনন্দিন কাজের বিষয়গুলোতেও অনুশীলন করাবে সিআরপি। 

এ বিষয়ে রাসেল সরকার বলেন, ‘কৃত্রিম পা পেয়ে আমি অনেক খুশি। পা লাগানোর পর আমার আগের জীবনের কথা মনে পরে গেলো। আজ থেকে আমি আগের মত হাঁটতে পারবো। সেই সাথে আমার নিজের কাজের জায়গায় আবার ফিরে যেতে চাই, যদি আমাকে সেই সুযোগ দেয়া হয়। সিআরপিতে এসে আমার নতুন জীবন খুঁজে পেয়েছি। তাই ধন্যবাদ সিআরপি ও এই সংস্থার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে।’

সিআরপি’র কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ শফিক ও ফিজিওথেরাপি বিভাগের ইনচার্জ ফারজানা শারমিন জানান, তার এ দুর্ঘটনার কারণে যেমন সবাই এগিয়ে এসেছেন আমরাও আমাদের থেকে তার জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। রাসেলকে আমাদের এখানে যে ধরনের সুবিধা দেওয়া সম্ভব আমরা তাকে সব ধরনের সুবিধা দেবো। 

সিআরপির নির্বাহী পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, কৃত্রিম পা সংযোজনের ফলে রাসেল তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। তার পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরাও আনন্দিত। 

উল্লেখ্য, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বাসিন্দা রাসেল সরকার রাজধানীর আদাবরে একটি ‘রেন্ট-এ-কার’ প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেটকার চালাতেন। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে বাকবিতণ্ডার জেরে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসের চালক ক্ষিপ্ত হয়ে রাসেলকে চাপা দেন। এতে তার বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

পা হারানোর বাস্তবতার গল্পটা বদলানো যাবে না। হাসি মাখা চেহারাটা, স্মৃতির আড়ালে চাপা পড়ে থাকবে আজীবন। এতো কিছু পরও গ্রিন লাইন বাসের চালকের বেপরোয়ায় পা হারোনো সেই রাসেল নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। পাশে দাঁড়িয়েছে সিআরপি। কৃত্রিম পা সংযোজনের মধ্য দিয়ে আবারও হাঁটবেন রাসেল।


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর