বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের একমাত্র সরকারি হাটটি ইজারা হয়নি গত দুই বছর। সরকারিভাবে ইজারা প্রদানের বিজ্ঞপ্তি দিলেও লোকসানের আশঙ্কায় কেউ অংশগ্রহণ করেননি। যে কারণে প্রতিবছর সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। ইজারা না হওয়ায় দুই বছরে হাটের কোন উন্নয়নও হয়নি।
বগুড়ার ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় ২ একর সরকারি জায়গায় প্রতি বুধবার সাপ্তাহিক হাট ও প্রতিদিন বাজার বসে। ধুনট উপজেলা পরিষদ থেকে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে হাটটি ইজারা দেওয়া হয়। বাংলা ১৪২৪ বঙ্গাব্দে (২০১৭ ইং) ইজারায় অংশ নিয়ে ৩১ লাখ টাকায় হাটটি ইজারা নেন গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লিয়াকত আলী লিটন। এর পরের দুই বছরে হাটটির কোন ইজারা অনুষ্ঠিত হয়নি। ইজারা না হওয়ায় একদিকে হাটটি হচ্ছে উন্নয়নবঞ্চিত অপর দিকে ইজারা প্রদান বাবদ রাজস্ব আদায়ও আর হচ্ছে না।
ইজারা দেয়া গেলে এই হাট থেকে রাজস্ব আদায় আরও বেশি হতো। কিন্তু কৌশলগত কারণে হাটটি ইজারা প্রদানের বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হলেও কেউ অংশগ্রহণ করেনি। আর উপজেলা প্রশাসন বলছে ইজারা না হওয়ায় হাটটি উপজেলা খাস আদায় কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোসাইবাড়ী বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, হাটটি ইজারা নেওয়ার পর সরকারি হাটের জায়গায় ২ হাজার ৫৩০টি দোকানঘর নির্মাণ করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়া হয়। এছাড়া সরকারি জায়গায় হাট বসানোর নিয়ম থাকলেও তিনি গোসাইবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসিয়েছেন।
বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা জানান, হাট বসায় অনেক ময়লা আবর্জনা মাঠের মধ্যে পড়ে থাকে। একারণে তারা খেলাধুলা করতে পারে না। ক্লাস চলাকালে হাটের কার্যক্রম চললে পড়ায় মনোযোগ দেয়া যায় না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুর রহমান বাবলু জানান, বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসানোর কারণে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা করতে সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে একাধিকবার ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ও হাট কমিটিকে অবগত করেও কোন প্রতিকার মেলিনি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলী লিটন বলেন, হাটটি ইজারা নেওয়ার পর ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে হাটের ইজারা কেউ নিচ্ছে না। কিছু কিছু খাজনা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া হাটের জায়গা কম থাকায় বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসছে। তবে এতে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।
ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকন বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর এক বার মাসিক সভা হয়েছে। কিন্তু হাট বিষয়ে কোন সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছুই জানা নেই।
বগুড়ার ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, হাটটি ইজারা দেওয়ার জন্য একাধিবার দরপত্র আহবান করা হয়েছিল। কিন্তু কেউ দরপত্র ক্রয় না করায় হাটটি ধুনট উপজেলা খাস আদায় কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়ায় হয়েছে। সেখান থেকে যে খাজনা আদায় হবে তা রাজস্ব খাতে জমা হবে। তবে সাবেক ইজারাদার খাজনা আদায় করছে কি না তা জানা নেই।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা