বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ত অথৈ পানির চিংড়ি ঘেরের মধ্যেই করা হয়েছে সৌদি খেজুরের বাগান। এখানে মরুভূমি এলাকার মরিয়ম, সুকারি, আম্বারসহ বাহারি জাতের খেজুর গাছে ঝুলছে। লম্বা ও গোলাকৃতির এসব খেজুরের কোনো ছড়া পেকে লাল রং আবার কোনোটি পাকার অপেক্ষায় হলুদ রং ধারণ করেছে। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের সন্ন্যাসী গ্রামের হাজিপাড়ায় এ খেজুর বাগানের ছোট-বড় ৪০০টি গাছের মধ্যে ৮০টিতে ছড়ায়-ছড়ায় ঝুলে রয়েছে খেজুর। কাছে থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো খেজুর বাগান। এমন দৃশ্য দেখাসহ ফলন হওয়া গাছ থেকে বের হওয়া অপস্যুট চারা কিনতে প্রতিদিনই দূরদূরান্তের সাধারণ মানুষসহ খামারিরা ভিড় করছেন।
বাগেরহাট শহরের আমলাপাড়ার বাসিন্দা কৃষি উদ্যোক্তা অ্যাডভোকেট দিহিদার জাকির হোসেন ২০১৮ সালে নিজের ১৫ একর চিংড়ি খামারের জমির মাটি কেটে উঁচু করে গড়ে তোলেন ‘রামপাল সৌদি খেজুর বাগান’। প্রথম বছর পরিক্ষামূলকভাবে মরিয়ম, সুকারি, আম্বার খেজুরের অপস্যুট চারা কিনে খামারে রোপণ করেন। নিবিড় পরিচর্যায় লবণাক্ত মাটিতেই বড় হতে থাকে খেজুরের এসব গাছ। কয়েক বছরের মধ্যে এসব গাছ ও গাছের গোড়া চিরে জন্ম নেয় অপস্যুট চারা। মাত্র তিন বছরের মধ্যে এসব গাছে খেজুর ধরেছে। পাশাপাশি এই খামারি অপস্যুট চারাগুলো বিশেষ পদ্বতিতে আলাদা করে বাগানে লাগাতে থাকেন। এভাবে প্রতি বছরই বাগানে বাড়তে থাকে গাছ ও খেজুর ধরা গাছের সংখ্যা। এখন তার বাগানে মরিয়ম, সুকারি, আম্বারসহ বাহারি জাতের ৪০০টি গাছ লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে চলতি উৎপাদন মৌসুমে তার ৮০টি গাছের ছড়ায়-ছড়ায় ঝুলছে খেজুর। গাছের প্রতিটিতে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত খেজুর ধরেছে। এসব খেজুর পাইকাররা প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করছেন। আর এক একটি অপস্যুট চারা খামারিদের কাছে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকায়। সৌদি খেজুরের বাগানটির মালিক অ্যাডভোকেট দিহিদার জাকির হোসেন জানান, খেজুরের গায়ে বৃষ্টির পানি লাগলে ফলন নষ্ট হয়ে যায়। পাখিতেও খুব নষ্ট করে। এজন্য এক প্রকার বিশেষ পলিথিন দিয়ে খেজুর ঢেকে রাখতে হয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বর্তমানে উগান্ডা নামের এক ধরনের পোকা খেজুর গাছ আক্রান্ত করছে। দেশে এই পোকা দমনের কোনো ওষুধ নেই। ওমান থেকে ওষুধ এনে ওই পোকা দমন করছি। সরকারের কাছে ন্যায্যমূল্যে বিশেষ পলিথিন ও উগান্ডা পোকা দমনের ওষুধের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি। এই খামারি বলেন, সরকারি প্রণোদনা পেলে ১০ বছরের মধ্যে দেশকে সৌদি খেজুর উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোতাহার হোসেন জানান, সফলতা দেখে বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কৃষি উদ্যোক্তা নতুন নতুন সৌদি খেজুর বাগান গড়ে তুলছেন। কৃষি বিভাগ এসব খেজুর খামারিদের প্রয়োজনীয় সহয়তা দিয়ে যাচ্ছে। গাছে খেজুর রক্ষায় বিশেষ পলিথিন ও উগান্ডা পোকা দমনের ওষুধ সরকারিভাবে ন্যায্যমূল্যে খামারিদের সরবরাহের ব্যবস্থা করা গেলে প্রতি বছরই দেশে সৌদি খেজুর উৎপাদন বাড়বে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।