আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সারা দেশের জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে চলছে নানান হিসাবনিকাশ। কয়েক মাস ধরে চলছে ডিসি নিয়োগের বাছাই প্রক্রিয়া। সর্বশেষ ২৮ ব্যাচের উপযুক্ততার তালিকা (ফিট লিস্ট) তৈরির কাজ শুরু হলেও কবে শেষ হবে কেউই বলতে পারছেন না। তবে আগস্টে হতে পারে বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো ধারণা করছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি, জামায়াত ও বিপ্লবীদের সংগঠন এনসিপির ত্রিমুখী রাজনৈতিক চাপের সমন্বয় করতে গিয়ে ডিসি বাছাই কার্যক্রম দেরি হচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সাড়ে পাঁচ মাস আগে শুরু হলেও ডিসি নিয়োগের বাছাই প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। তবে রাজনৈতিক বিবেচনা পরিহারের পরামর্শ দিয়েছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, বর্তমানে ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা সারা দেশে ডিসির দায়িত্ব পালন করছেন। এরই মধ্যে ২১ জন ডিসি প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। তাঁদের জেলা থেকে প্রত্যাহার করা হয়নি। নতুন ডিসি নিয়োগের আগেই জেলায় কর্মরত ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মাঠ থেকে তুলে আনা হবে। সেখানে ২৫, ২৭ এবং ২৮ ব্যাচ থেকে ডিসি নিয়োগ দেবে সরকার। এ ছাড়া ২৫ ও ২৭ ব্যাচের যেসব কর্মকর্তা মাঠে সঠিকভাবে কাজ করতে পারছেন না তাঁদের তুলে আনা হবে। বাকি কয়েকজনের জেলাও রদবদল হতে পারে। সূত্র জানান, নির্বাচন তফসিলের আগে যাঁরা ডিসি হিসেবে কাজ করছেন তাঁদের মধ্যে যাঁরা মাঠ থেকে উঠে আসবেন সেখানে নতুনদের নিয়োগ দেওয়া হবে। নতুন ও পুরোনো ডিসিরা মিলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন। এ কারণে এ ডিসি নিয়োগে ভিতরে ভিতরে চলছে নানান হিসাবনিকাশ। এক সূত্র জানান, ২৫ এবং ২৭ ব্যাচ থেকে বেশি কর্মকর্তা মাঠে রাখতে মরিয়া সরকারের একটি মহল। মহলটি জামায়াত ঘরানার কর্মকর্তাদের ডিসি পদে রাখতে চায়। তাদের দাপটে বিএনপি ঘরানার কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। এদিকে রাজনৈতিক বিবেচনা অগ্রাধিকার পাবে এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়ায় অনেক কর্মকর্তা ডিসি ফিট লিস্টের সাক্ষাৎকারে অংশ নিচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ স্বেচ্ছায় আবেদন করে সাক্ষাৎকার থেকে বিরত থাকছেন। সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে অনাগ্রহী একাধিক কর্মকর্তা জানান, ডিসি হওয়ার আগ্রহ নেই। আগের ডিসিদের দেখেছি। সিদ্ধান্ত মানলেও দোষ, না মানলেও বিপদ। এর চেয়ে ভালো চুপচাপ থাকা। যেখানে দায়িত্ব দেবে সেখানেই কাজ করতে চান তাঁরা। এদিকে ডিসি পদায়নে বিলম্ব হওয়ায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫, ২৭, ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তারা পড়েছেন জটিলতায়। কারণ ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের ডিসি পদে ফিট লিস্ট তৈরির জন্য সাক্ষাৎকার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্তভাবে বাছাই করে ডিসি পদে পদায়ন করতে পারছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এদিকে ২৮তম ব্যাচের ফিট লিস্ট তৈরির কাজ শুরু হলেও প্রথম দফায় ৪০ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর সেটিও বন্ধ রয়েছে। এদিকে গত মে মাসের জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটির সভায় উপদেষ্টাদের কেউ কেউ ২৫ এবং ২৭ ব্যাচকে নির্বাচনের সময় ডিসি রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। সে সভার সূত্রানুযায়ী, এক উপদেষ্টা বলেছেন, ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পেয়েছেন। তাই তাঁদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় ডিসি হিসেবে মাঠে রাখা ঠিক হবে না। ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে রাখলে ভালো হবে বলে মত দিয়েছেন তিনি। এদিকে অনেকে রাজনৈতিক সুপারিশ নিয়ে হাজির হচ্ছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ফিট লিস্ট প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের কাছে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জেলার ডিসি হিসেবে একজন ভালো কর্মকর্তা জরুরি। রাজনৈতিক সমন্বয় করলে কর্মচারীরা রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিক হয়ে যাবেন। তাহলে আওয়ামী লীগ যা করেছিল আবার তা-ই হবে। দক্ষ, সৎ এবং চৌকশ কর্মকর্তা ডিসি নিয়োগ দিলে সেটা রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গল হবে।