রাজধানীর বেশির ভাগ বাস চলছে রুট পারমিট ছাড়াই। কিছু কোম্পানির বাসের রুট পারমিট থাকলেও তা নির্ধারিত রুটে চলছে না। বেশি যাত্রীর আশায় এক রুটে একাধিক কোম্পানির বাস চলাচল করছে। এতে অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। বিআরটিএ তালিকা অনুযায়ী রাজধানীতে অনুমোদিত রুট রয়েছে ৩৮৮টি। এর মধ্যে বাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে ২৯৩টি রুট। আবার নিয়মিত বাস চললেও ১২ রুটের নেই কোনো অনুমোদন। ৩৪টি রুটে চলছে কয়েক গুন বেশি বাস। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৪৬টি বাস চলছে কোনো রুট পারমিট ছাড়াই। এ ছাড়া রাজধানীর সড়কে অবৈধভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ২৭ হাজারের বেশি লেগুনা।
বিআরটিএর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। আবার ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির (আরটিসি) তালিকা অনুযায়ী দেখা যায়, রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে গাজীপুর পর্যন্ত এ-২২৫ নম্বর রুটে বিভিন্ন মালিকের ১৫৮টি মোটরযান অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে রুট পারমিট ইস্যুকৃত মোটরযানের সংখ্যা মাত্র ৪২টি। কিন্তু বাস্তবে এই রুটে গাড়ি চলে ১৮০টি। আবার অন্য রুটে গাড়ি রয়েছে ২০টি। রুট পারমিটবিহীন গাড়ি রয়েছে ৩৯টি। ফিটনেস মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযান রয়েছে ৮টি। একই অবস্থা এ-২৩৪ রুটেও। শ্রাবণী ট্রান্সপোর্ট মদনগঞ্জ থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ৩৫টি বাসের অনুমোদন থাকলেও চলছে ১০৩টি বাস। এর মধ্যে অন্য রুটের বাস চলছে ৮১টি, রুট পারমিটবিহীন বাস ১২ ও অবৈধ বাসের সংখ্যা ২৪টি। ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির (আরটিসি) আহ্বায়ক হলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার। এ কমিটিতে রয়েছেন সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। ২২ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির সদস্য সচিব হলেন বিআরটিএর ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে এই কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি। তাই ২০১৮ সাল থেকে ঢাকা মহানগরীতে বাস ও লেগুনার রুট পারমিট বন্ধ রয়েছে।
রুট পারমিট ছাড়াই চলছে ১৬৪৬ বাস : ঢাকা মহানগরীতে কাগজে-কলমে ৯৫টি সক্রিয় রুটে ৭ হাজার ৯১টি বাস নিবন্ধিত রয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪২৭টি বাস নিজস্ব রুটে চলাচল করলেও ২ হাজার ১৮টি বাস চলছে অন্য রুটে চলাচল করে। এ ছাড়া ১ হাজার ৬৪৬টি বাস কোনো রুট পারমিট ছাড়াই ঢাকায় চলাচল করছে। ডিটিসিএ সূত্রে আরও জানা যায়, অনুমতি ছাড়া ১৯টি কোম্পানি ২০২৪ সালে তাদের নির্ধারিত রুট পরিবর্তন করেছে। ২০টি বাস কোম্পানি নির্দিষ্ট সিলিং নম্বরের বাইরে অতিরিক্ত বাস পরিচালনা করছে। ৯টি বাস কোম্পানির মালিক প্রভাব খাটিয়ে আরটিসি কমিটি থেকে সিলিং নাম্বার বাড়িয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া কয়েকটি বাস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বা আমদানিকারকের নামে বাস রুট দেওয়া হলেও চলছে ভিন্ন নামে।
এ বিষয়ে ডিটিসিএর ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ধ্রুব আলম বলেন, পরিবহন মালিকরা রুট পারমিট নিয়ে বেশি আয়ের আশায় অন্য রুটে চলে যান। পরে বাসের নাম ও রং পরিবর্তন করে অনুমোদন ছাড়াই ওই রুটে চলাচল করেন। ফলে কিছু রুটে অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করছে, যা ট্রাফিক জট ও বিশৃঙ্খলা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় রুট পারমিট দেওয়া হলে তা হতো সাংঘর্ষিক। তাই ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নতুন কোনো রুট পারমিট দেওয়া হয়নি। এতে নতুন বাস পরিচালনা বন্ধ হয়ে গেছে। বিআরটিএ তালিকা অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীতে অনুমোদিত রুট রয়েছে ৩৮৮টি। এর মধ্যে সচল রুট রয়েছে ১১০টি। চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের মাধ্যমে বাস রুট ভেরিফিকেশন শীর্ষক ট্রাফিক জরিপের নতুন ৯৫টি রুট পায়। এর মধ্যে ৫টি রুট ২০২১ সালে সচল ছিল না, পরে চালু হয়েছে। ১৪টি বাস রুটে বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। দিিট রুট চালু রাখা হয়েছে নাম পরিবর্তন করে।