রূপগঞ্জের পাশ্ববর্তী ডেমরায় বকেয়া বেতন পরিশোধসহ ৯ দফা দাবিতে পাটকল শ্রমিকদরে অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। আন্দোলনের চতুর্থ দিনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ রাখে। তবে সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্নভাবে অবরোধ এদিনও শেষ হয়।
এদিকে প্রচন্ড গরমে ক্ষুধার্থ ও রোজাদার শ্রমিকদের উপস্থিতি পর্যায়ক্রমে কমে আসছে বলে লক্ষ্য করা গেছে। এদিন খন্ড-খন্ড ভাবে দেড় থেকে ২শ’ শ্রমিকের উপস্থিতি দেখা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ডেমরায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিগত দিনের মতো উৎপাদন বন্ধ রেখে একইভাবে সড়ক অবরোধ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত লতিফ বাওয়ানী ও করিম জুট মিলের শ্রমিকরা। এ সময় তারা ডেমরা-যাত্রাবাড়ী, ডেমরা-রামপুরা ও ডেমরা-শিমরাইল সড়ক অবরোধ করে। এদিন অল্প সংখক পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা ডেমরার তিনটি প্রধান সড়কে বেরিগ্যাট দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে রাখে। পাশাপশি অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে গাছের গুঁড়ি, ঢালাইয়ের খুঁটি ও ইট পাথর ফেলে ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এদিনও রাস্তায় টায়ার, কাঠ-বাঁশে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও লঠি মিছিল করেন। এছাড়াও তারা ডেমরার ষ্টাফ কোর্য়াটার মোড়, ডেমরা চৌরাস্তসহ ও সুলতানা কামাল ব্রীজের পশ্চিম পার্শ্বসহ কয়েকটি পয়েন্টে লাঠি সোটা নিয়ে অবস্থান নেয়। শুক্রবার সকাল থেকে আবারও তারা সড়ক অবরোধে নামবেন বলে শ্রমিকরা জানায়। তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ অবরোধ চলবে বলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে শ্রমিকরা জানান, আমারা গরীব-অসহায় বলে আমাদের দিকে পাটকল কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারি নেই। কিন্তু আমাদের ঘাম-রক্তের কামাই কিছুতেই নষ্ট হতে দেবোনা। যত দিনই লাগুক আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখব। প্রয়োজনে রাস্তায় জীবন দেবো, কারণ এমনিতেই আমরা মরে গেছি। এখন আর মৃত্যুর ভয় নেই।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিজেএমসিকে দোষারোপ করে বলেন, বিজেএমসি’র লোকজন পাটকলগুলোকে লুটে পুটে খেয়েছে বলে এখন শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করতে পারছেনা সরকার। সরকার সঠিকভাবে তদন্ত করলেই পাটকলের দুর্নীতির রহস্য বের হয়ে যাবে। তখন লুটপাটকারীরা ধরা পরে যাবে। আর পাটকলের টাকা আত্মসাতকারীদের আইনের আওতায় আনা হোক।
শ্রমিকরা আরও বলেন, পাটকলে কোনভাবেই লোকসান হওয়ার কথা নয়। সঠিকভাবে কারখানা পরিচালিত হলে কোন দিন শ্রমিকের মজুরি আটকাবে না। শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত সঠিক পরিশ্রম করে উৎপাদন করে। সরকারি পাটকলগুলোতে পাটক্রয়কারীরাও ভাল পাটের পরিবর্তে খারাপ ক্রয় করে যা বেসরকারি পাটকলে সম্ভব নয়। অথচ সরকারি পাটকলগুলোর প্রতিটি সেক্টরেই চুরি ও দুর্নীতি হচ্ছে। মোটকথা পাটকলে চুরি বন্ধ হলেই পাটকলগুলো ভাল চলবে।
জানা যায়, গত ৮ সপ্তাহের বকেয়া বেতন ও মজুরি কমিশনসহ ৯ দফা দাবিতে ইতিপূর্বেও শ্রমিকরা নানা কর্মসূচি পালন করলেও তাদের দাবি পূলণ করা হয়নি। কিন্তু আশ্বাস দিয়ে সরকার শ্রমিকের বিষয়টি আমলে নেয়নি।
এ বিষয়ে ডেমরা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল আউয়াল বলেন, বৃহস্পতিবারও শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ করেছে বলে পুলিশ তাদের প্রতি নমনীয়ই ছিল। তারা শুক্রবার থেকে আবারও রাস্তায় নামবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে সরাদিন ডেমরায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় পথচারী, অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থীরাসহ স্থানীয়দের দুর্ভোগ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। কাচা বাজারেও দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি দেখা যায়। তাছাড়া ডেমরা ও আশপাশের এলাকায় মালামাল সরবরাহকারী যানবাহনগুলোকে সুলতানাকামাল ব্রিজসহ রাস্তায় অপেক্ষামান লক্ষ্য করা গেছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার