স্কুলের নাম ৭৯ নম্বর কালীবাড়ি পিকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হলেও এটির অবস্থান বরিশাল নগরীর নাজিরের পোল এলাকায়। এক সময় এই স্কুলের প্রায় ৮ শতাংশ জমি থাকলেও এখন আছে মাত্র ২ শতাংশ। চারপাশে পাকা ভবন থাকায় অনেকটা আলো-বাতাসহীন খুপড়ি ঘরের মতো কাঠের একটি অবকাঠামোর মধ্যে একটি কক্ষে নেওয়া হয় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাশ। পাশেই খোলা টয়লেট। নেই সুপেয়ে পানির কোন ব্যবস্থা। বৃষ্টি হলে টিনের চালা দিয়ে পানি পড়ে অঝোরে। আবার মেঝেতেও জমে যায় পানি। এসব কারণে এই স্কুলে স্থায়ী হয়না কোন শিক্ষার্থী। এখানে ভর্তি হলেও কিছুদিন পড়ালেখার পরই চলে যায় আশপাশে ভালো অবকাঠামোওয়ালা স্কুলে।
সারা দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইলেও তার ছিটেফোঁটাও লাগেনি এই স্কুলে। স্কুলের এই দুরাবস্থা থেকে উত্তরণ চায় শিক্ষার্থীরা। তারা চায় আধুনিক ভবন, সু-পরিসর খেলার মাঠ সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। একই দাবী এলাকাবাসী সহ শিক্ষকদেরও।
এদিকে সমস্যায় জর্জরিত এই স্কুলটিকে আশপাশের কোন স্কুলের সাথে একত্রিকরণ করা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। অপরদিকে একত্রিভূতকরণ নয়, স্কুলের সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক।
৭৯ নম্বর কালীবাড়ি পিকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয় ১৮৪৮ সালে। স্কুলটি নগরীর কালীবাড়ি রোড থেকে কবে এবং কেন নগরীর নাজিরের পোল এলাকায় স্থানান্তরিত হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস বলতে পারছে না কেউ। তবে নাজিরের পোল এলাকায় ওই স্কুলের ছিলো প্রায় ৮ শতাংশ জমি। দিনদিন আশপাশের মানুষের গ্রাস করার পর এখন মাত্র ২ শতাংশ জমিতে দাঁড়িয়ে আছে একটি নাজুক টিন-কাঠের ঘর। সরু ঘিঞ্জি রাস্তা এবং আশপাশের বিভিন্ন পাকা অবকাঠামোর কারণে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস বঞ্চিত স্কুলের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা। ১৭১ বছরের পুরনো এই স্কুলে বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ৬জন এবং শিক্ষক ৩জন।
স্কুলের শিক্ষক পারভীন সুলতানা জানান, আশপাশের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হলেও শিক্ষার পরিবেশ না থাকা সহ অবকাঠামো সমস্যার কারনে কিছুদিন পরই তারা চলে যায় আশপাশের ভালো অবকাঠামোওয়ালা স্কুলে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেছা বলেন, স্কুলের একটি কক্ষে ৮-৯টি বেঞ্চ। একই সময় একাধিক ক্লাশ নিতে গেলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করানো যায়না। আশপাশে এত আকর্ষণীয় স্কুল যে নূন্যতম সুযোগ-সুবিধা না থাকায় এই স্কুলে শিক্ষার্থী ধরে রাখা যায়না। বিষয়টি পুরনো এবং এ বিষয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু কোন ফল হচ্ছেনা বলে জানান প্রধান শিক্ষক।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মো. মনির হোসেন জানান, বহুবার স্কুলের উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু সু-পরিসর জায়গা না থাকায় বরাদ্দের অর্থ ফেরত চলে গেছে।
বরিশাল প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক এসএম ফারুক জানান, গত কয়েক বছর ধরে ওই স্কুলে শিক্ষার্থী বাড়ানোর অনেক উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন তারা। দিন দিন স্কুলটি ছাত্র-ছাত্রী শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় এই স্কুলটি আশপাশের কোন স্কুলের সাথে মার্চ (একটিভূত) করে শিক্ষকদের সেখানে পদায়ন করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখবেন বলে তিনি জানান।
এদিকে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেছেন, কালীবাড়ি পিকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিলুপ্ত করার সুযোগ কম। স্থানীয়রা এই বিষয়টি মেনে নাও নিতে পারেন। বিদ্যমান জায়গায় রেখেই স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম সমন্বিত করার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন