১৬ জুলাই, ২০১৯ ১৮:১১

বগুড়ায় ৯০০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ায় ৯০০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত

বগুড়ায় যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গত চারদিন ধরে পানি বৃদ্ধির ফলে শতাধিক গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। পানিবন্দি হয়ে আছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ৯০০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। 

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরও অন্তত ৩ দিন পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকতে পারে। তবে বন্যার কবলে পড়া তিন উপজেলার প্রায় ৮০ হাজার মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বগুড়ার মথুরাপাড়া পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত শনিবার দুপুরে চলতি মৌসুমে বগুড়ায় প্রথম বিপদসীমা অতিক্রম করে যমুনা নদীর পানি। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধিতে বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার মোট ২৯ ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। 

এছাড়া পাট, আউশ ধান, মরিচ, আমন বীজতলা ও বিভিন্ন সবজির প্রায় ৯০০ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। অপরদিকে, বাঙালি নদীর পানি বিপদসীমার ২৪ সে.মিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার চর এলাকাসহ বিস্তির্ণ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়ে পরেছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় ২ হাজার ৪শ ৫৭টি টিউবওয়েল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে।

বগুড়া জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে আসা ঢলে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে জেলার যমুনা তীরবর্তী সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনটের বন্যা পরিস্থিতর সৃষ্টি হয়েছে। ৩টি উপজেলায় নতুন করে ৯টি ইউনিয়ন ও ৯৯টি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। তিন উপজেলায় ২৩টি ইউনিয়নের ৯৮টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মঙ্গলবার ৯৬০টি পরিবার নতুন করে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় মোট ক্ষতিগ্রস্থ পরবারের সংখ্যা ১৭ হাজার ৪০০টি। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন, গ্রাম ও পরিবারের সংখ্যা বেশি সারিয়াকান্দি উপজেলায়। এই উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখানে ৬৪টি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা ১২ হাজার ১০০টি। ৩টি উপজেলায় নদী ভাঙ্গনে ১৪৫টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে এবং ২৯০টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। 

বগুড়ার সিভিল সার্জন ডাক্তার গওসুল আজিম চৌধুরী জানান, বন্যা কবলিত তিন উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ২৯টি মেডিকেল টিম স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে। তারা খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করছেন। পানি বাহিত রোগে এ পর্যন্ত ১৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১০ জন ডায়রিয়া, ৪ জন নিউমোনিয়া ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ জন। 

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলো হলো- সারিয়াকান্দি পৌরসভা, হাটশেরপুর, চালুয়াবাড়ী, কাজলা, কর্ণিবাড়ী, বোহাইল, কামালপুর, চন্দনবাইশা, কুতুবপুর, সারিয়াকান্দি, নারচি, ফুলবাড়ী, ভেলাবাড়ী। বন্যায় ১৪০টি ঘরবাড়ির অংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৯টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৩৬টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও ৮টি ইউনিয়নে ২শ ২২টি পুকুর ও জলাশয় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ২ হাজার পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে এবং ৪৫টি পরিবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। 

সারিয়াকান্দি এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর সাহায্যের জন্য ১০১ মেট্রিক টন জিআর চাল ও ৭টি আইটেমের প্রতিটি প্যাকেট ১৬ কেজি করে ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করা হয়। এসব খাদ্য শস্য বন্যার্তদের মাঝে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সারাদিন আব্দুল মান্নান এমপি উপস্থিত থেকে বিতরণ করেন। 

আব্দুল মান্নান এমপি উপজেলার বিভিন্ন দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং বানভাসীদের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি সকলকে সহযোগিতা করার কথা বলেন। 

বগুড়া-১ আসনের এমপি আব্দুল মান্নান জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ বিতরণ নিয়ে কোনো অনিয়ম হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বন্যার্তদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে। কৃষকদের কৃষি অফিসের সাথে কথা বলে তাদেরও সহযোগিতা করা হবে। বন্যায় প্রতিটি পরিবারকে খাবার সামগ্রী দেয়া হচ্ছে। সরকারিভাবে প্রচুর পরিমাণে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। 

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্ধার্থ ভৌমিক জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক জেলা প্রশাসন খোঁজ খবর নিচ্ছেন। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। যমুনা নদীর চর গ্রামে কিছু নদী ভাঙ্গন থাকলেও ডান তীরসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। 

বগুড়া জেলা প্রশাসকের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তা আজাহার আলী মন্ডল জানান, ত্রাণ হিসাবে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ২৫১ মেট্রিক টন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। যমুনা তীরবর্তি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, সাড়ে ৩০ দশমিক ৫০০  মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। জেলায় প্রচুর ত্রাণ সামগ্রী মজুদ আছে। শনিবার বিকালে ৩০০ মেট্রিক টন চালসহ ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে ৫ লাখ টাকা নতুন করে পাওয়া গেছে।

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর