পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় স্বামীর পরকীয়ার পর দ্বিতীয় বিয়েতে বাঁধা দেওয়ায় তিন সন্তানের জননী সাবেকুন্নাহার ঝুমুরকে (৩২) নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ঘরের মধ্যে আটকে রেখে স্বামী মো.রফিকুল ইসলাম মীর মধ্যযুগীয় কায়দায় এ নির্যাতন চালান।
মঙ্গলবার গভীর রাতে উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের চর নিশানবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে আহত গৃহবধূর বাবার বাড়ির লোকজন বুধবার সকালে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করে। তার কানের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসক পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
বৃহস্পতিবার সকালে নির্যাতিতা ঝুমুর নিজেই নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেলে (ওসিসি) গিয়ে এ ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। ওসিসি বিষয়টি আমলে নিয়ে তার কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ রেখেছে।
ঝুমুর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমারে বন্দী কারাগারের মতো রাখা হতো। কোন আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে দিত না। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাইতে খুন করতে চেয়েছিল। দিশেহারা এ গৃহবধূকে তার শ্বশুর আব্দুল হক ও শাশুড়ির সামনে বসেই এমন নির্দয় নির্যাতন করা হতো বলে ঝুমুরের দাবি। বর্তমানে সে দিশেহারা হয়ে গেছে। তিন সন্তান নিয়ে কী করবেন তাও বুঝে উঠতে পারছেন না। শুধু চোখের জল ফেলে কান্না করছেন।
আহত ঝুমুরের বড় ভাই জাহঙ্গীর মাতুব্বর জানান, দীর্ঘ ১৭ বছর আগে ধানখালী ইউনিয়নের চর নিশানবাড়িয়া গ্রামে আব্দুল হক মীরের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম মীরের সাথে পারিবারিক সম্মতিক্রমে তার বোনের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে আসে তিনটি কন্যা সন্তান। তবে সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু বছর খানেক আগ থেকেই তার বোনের বাড়ির এক ভাড়াটিয়ার স্ত্রীর এক সন্তানের জননীর সাথে পরকিয়ায় জরিয়ে পরে তার বোন জামাই রফিক। এক পর্যায় পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। এনিয়ে প্রায়শই নির্যাতন চালানো হতো ঝুমুরের উপর। বোনের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সবকিছুই মুখ বুঝে সহ্য করতেন তারা। সর্বশেষ মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘরের দরজা বন্ধ করে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। পাশের বাড়ির নিকট আত্মীয় মোবাইল করে নির্যাতনের বিষয়টি জানায়। ওই রাতে কোন উপায় না পেয়ে ইউপি সদস্য মো.জালালকে অবগত করা হয়। পরদিন বুধবার সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ তালুকদারের সহযোগিতায় ঝুমুরকে উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে নির্যাতিতা ঝুমুরের বড় ভাই জাহঙ্গীর মাতুব্বর জানিয়েছেন।
এ বিষয় অভিযুক্ত মো. রফিকুল ইসলাম মীরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
চিকিৎসক আশরাফুল জানান, শরীরের বিভিন্ন ধরনের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এখন ফের কানের পর্দায় সমস্যার কথা বলছে। ওই চিকিৎসা অন্যত্র করাতে হবে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারমান রিয়াজ তালুকদার জানান, বিষয়টি অমানবিক। গৃহবধূর ভাই আমাকে জানানোর পর প্রতিনিধি পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠাই।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল (ওসিসি) উপজেলা প্রোগ্রাম আফিসার মো.ইদ্রিস আলম জানান, ভিক্টিমের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা শুনেছি। সে লিখিত দিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত রফিকের সাথে কথা বলেছি।
কলাপাড়া থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানান , তিনি এ ধরনের কোন অভিযোগ পাননি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল